সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ও এর সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে— এ দেশ নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘শিক্ষা সম্মেলন ২০২৫’-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, যখন শিক্ষক স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন না, শিক্ষার্থীরও স্বাধীনতা ক্ষয় হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আজকের শিক্ষক সমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের প্রধান কারিগর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় শিক্ষকদের স্বাধীনতা আজ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। একজন শিক্ষক যখন স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন না, তখন শিক্ষার্থীও মুক্তভাবে চিন্তা করতে শেখে না।’
মো. রেজা-উন-নবী বলেন, ‘শিক্ষককে শুধু শ্রেণিকক্ষের মানুষ ভাবলে ভুল হবে— শিক্ষক জাতির বিবেক, জাতির নির্মাতা। তার মর্যাদা রক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা। শিক্ষককে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষক নিজে যেমন শিখবেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগিয়ে তুলবেন জ্ঞান, নীতি ও দেশপ্রেমের আলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দেশের সম্পদ লুটে বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছে, যারা নীতি, শিক্ষা ও সততার পথে বাধা সৃষ্টি করছে— তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। অন্যথায় শিক্ষা থাকবে শৃঙ্খলে, আর দেশ হারাবে তার আত্মা।’
জুলাই আন্দোলনে নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘যারা সে সময় নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিল, তাদের প্রতি জাতির ঘৃণা চিরকাল থাকবে। বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের দায়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের প্রতীকী মূর্তি স্থাপন করে আজীবন ঘৃণা জানানো উচিত।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন এবং সঞ্চালনা করেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সাকিল আহমেদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া আক্তার, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদা নাজমীন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন: নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, উপজেলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খালেদুর রহমান, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছনি আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দপুর বাজার ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলী আক্কাস মোল্লা, আউশকান্দি রশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইকবাল বাহার তালুকদার, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুজতাহিদ উদ্দিন, দারুল হিকমা দাখিল মাদ্রাসার সুপার লুৎফুর রহমান ও হীরা মিয়া গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ রঞ্জন দাশসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন: নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যয় হাশেম, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক এস. আর. চৌধুরী সেলিম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক মনি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র সরকার, বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাদিকুর রহমান শিশু, প্রেসক্লাবের সদস্য অঞ্জন রায়, জুয়েল আহমদ, সাগর আহমদসহ উপজেলা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও শিক্ষকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উত্তীর্ণ ১০৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।




