ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার তুলাই শিমুল গ্রামের শহীদ শিশু জাবির ইব্রাহিমের জন্ম হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ মে। যদিও সে জীবনে মাত্র একবারই জন্মদিন উদযাপন করতে পেরেছিল, তবুও প্রতি মাসের ১৯ তারিখ তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছে বিশেষ মনে হয়। দেয়ালে ‘১৯’ লিখতে ‘৯’ এর স্টিকার লাগায় জাবির, পরে ‘১’ এর স্টিকার খুঁজতে গিয়ে আর তাকে পাওয়া গেল না।
জাবিরের বাবা কবির হোসেন ভূইয়া জানান, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিজয় উৎসবের ভেতরেরই পুলিশের গুলিতে ছয় বছরের জাবির। সে ছিল ওই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শিশুদের একজন।
জাবির পড়াশোনা করত ঢাকার উত্তরায় কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি বিভাগে। সে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল। পরিবারের সদস্যরা এখনো জাবিরের স্মৃতি ধরে রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তবে বিচার কিংবা যথাযথ স্মরণায় এখনো সন্তোষজনক কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
জাবিরের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘ছেলের সাইকেল, কাঠের টুকরা দিয়ে বানানো ব্যাংক আমাদের কাছে অমূল্য স্মৃতি। প্রতি মাসের ১৯ তারিখ এলেই মনটা ভারি হয়ে ওঠে। জাবির জন্মদিনের দিনটাকে সে আলাদাভাবে মনে রাখত। দেয়ালে লাগানো ‘৯’ এর স্টিকার সরাতে কখনো দিইনি।’
তিনি আরও জানান, ‘জাবির শহীদ হওয়ার দিনটি কখনো ভুলবার নয়। সে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দু’বার ‘বাবা’ বলে ডাক দিয়েছিল। সেই ডাক আজও আমার কানে বাজে।’
জাবির শহীদ হওয়ার দিন সকালে বাবা কবির হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছিল, ‘আমি আর্মি অফিসার হবো। পুলিশ আমার ভাইদের মারছে, আমি তাদের মারব।’
বাবা বলেন, ‘আমার জাবির সেই আশা নিয়েই আনন্দের সঙ্গে বিজয় উৎসবের মিছিলে যোগ দিয়েছিল।’
বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার একটি সেতুর ওপর গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে সবাই দৌড়াতে শুরু করলে জাবিরের পায়ে গুলি লাগে এবং সে সেখানেই পড়ে যায়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকের অবহেলায় শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
জাবিরের পরিবার ও গ্রামের মানুষ এখনো তার হত্যার বিচার দাবি করছেন। সম্প্রতি আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মাঠে শহীদ জাবির স্মরণে একটি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
তবে পরিবার ও স্থানীয়রা আরও বেশি স্মৃতি সংরক্ষণ ও শহীদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদানের উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।