ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্বর্ণকারদের দোকানে প্রতিদিন সকাল ও রাত—দুই সময়ই ঝাড়ু দেওয়া হয়। তবে এই ঝাড়ু কেবল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাড়তি আয়ের এক চমকপ্রদ রহস্য।
দোকানের মালিক ও কারিগররা ঝাড়ু দিয়ে ওঠানো ধুলাবালি ফেলে দেন না। বরং নির্দিষ্ট জায়গায় জমিয়ে রাখেন। এক বছর শেষে সেই ধুলোবালি বিক্রি করেই মিলছে মোটা অঙ্কের টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেউ কেউ বছরে দেড় লাখ টাকার মতো আয় করছেন এভাবে।
স্বর্ণের গয়না তৈরির সময় কাটিং, পলিশ ও ডিজাইনের কাজে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বর্ণকণা মেঝেতে পড়ে যায়। সাধারণ ধুলাবালির সঙ্গে মিশে যাওয়া এসব কণা যত্ন করে আলাদা করে রাখা হয় এবং পরে নির্দিষ্ট পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী জুটন দাস বলেন, ‘আমাদের ধুলাবালিরও অনেক চাহিদা আছে। প্রতিদিনের উচ্ছিষ্ট জমিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করি। সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। তবে এখন বেচাকেনা কিছুটা কম।’
আরেক ব্যবসায়ী সাইদী ইসলাম বলেন, ‘দোকানের ধুলাবালি, ব্যবহৃত কাপড়সহ সব উচ্ছিষ্টই পাইকারদের কাছে বিক্রি করা যায়। সাধারণ মানুষ বিশ্বাসই করবে না—আমাদের দোকানের ধুলোবালির দাম হাজার হাজার টাকা। আমি প্রতিবছর ৬০-৭০ হাজার টাকার ধুলাবালি বিক্রি করি। এই আয় থেকে দোকান ভাড়া দিই এবং কারিগরদেরও খুশি করি।’

এই ব্যতিক্রমী উপার্জনের কথা শুনে অবাক সাধারণ মানুষও। কসবা পুরাতন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী এইচ এম মামুন বলেন, ‘ধুলাবালি বিক্রি করেও টাকা আয় করা যায়—এটা আজ প্রথম জানলাম। আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।’
প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টি কোনো কিছুই ফেলনা নয়। সঠিকভাবে খুঁজলে এমন মূল্যবান জিনিসের সন্ধান পাওয়া যায়।’
দিন দিন স্বর্ণের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি এর উচ্ছিষ্ট, ফেলনা বা ধুলোবালির দামও বাড়ছে। সচেতন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা তাই এখন এসব সামগ্রী যত্নে সংরক্ষণ করে বাড়তি আয় করছেন। এটি যেমন ব্যবসায়িক চাতুর্যের উদাহরণ, তেমনি কর্মদক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তারও প্রমাণ।
আপনার মতামত লিখুন :