রাজশাহীতে জুলাই অভ্যুত্থানের সাড়ে ১৩ মাস পর করা একটি মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এনসিপি নেতারা। মামলায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের অনেকেই রাজশাহীতে ‘টাকাওয়ালা ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত। এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, মামলা নিয়ে বাণিজ্য করতেই তাদের আসামি করা হয়েছে।
এই মামলার বাদী কৌশিক ইসলাম অপূর্ব। তার বাড়ি নগরের শিরোইল কলোনি এলাকায়। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহী নগরের আলুপট্টি মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এর ১৩ মাস ১৫ দিন পর গত ২০ সেপ্টেম্বর চুরি, হুমকি, মারধর ও বিস্ফোরক আইনে নগরের বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলা করেন।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে। এজাহারে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী, চিকিৎসক, কোচিং সেন্টারের মালিক ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এ মামলায় আসামি হয়েছেন এমন একজন প্রকৌশলী জানান, তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। এর আগেও তাকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছিল। চাকরি রক্ষায় মোটা টাকার বিনিময়ে মামলার বাদী তাকে অ্যাফিডেফিট করে দেন, ভুল করে এজাহারে তার নাম দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার তিনি আর টাকা দিয়ে অ্যাফিডেফিট করতে চান না।
এমন অভিযোগ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মোবশ্বের আলীও গত বুধবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মামলার বাদী অপূর্বকে ‘আমাদের সুপরিচিত’ উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা পার্টির কেউ এ মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত না। কেউ কেউ এ মামলা নিয়ে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামে বড় ফিগারের অর্থ দাবি করছে শুনতে পাচ্ছি। মামলাটিকে বাণিজ্যিক মামলা হিসেবে ব্যবহার করারও অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে।’
পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ এটা এনসিপির মামলা হিসেবে বলার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক নয়। আমরা নিরপরাধ ব্যক্তির পাশে আছি, আবার বাদীর পাশেও আছি। তাকে যদি হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমরা তার পাশেও থাকব’।
এজাহার থেকে দেখা গেছে, মামলার ১২৯ নম্বর আসামি তামান্না ইয়াসমিন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) একজন অফিস সহকারী। অথচ তাকে আওয়ামী লীগের অর্থদাতা বলা হয়েছে। তার মতো আরও অনেক চাকরিজীবী আসামি হয়েছেন এ মামলায়।
মামলা গ্রহণের বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সংঘটিত কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ মামলা করতে এলে ওসি হিসেবে আমি মামলা নিতে বাধ্য’। মামলা নিয়ে বাণিজ্যের বিষয়ে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। মামলার বাদী কৌশিক ইসলাম অপূর্বের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন