শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরিয়ান স্ট্যালিন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

পৃথিবী জ্বলছে, পৃথিবী ডুবছে

আরিয়ান স্ট্যালিন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আগে বছরে দুই মাস অন্তর ঋতুর পরিবর্তন হতো। ফলে বৈশিষ্ট্য দেখে প্রতিটি ঋতু সহজেই চেনা যেত। কিন্তু বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য আলাদা করে ধরা পড়ে না। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে, যার মধ্যে রয়েছে জীবনহানি, স্বাস্থ্য সমস্যা, খাদ্যসংকট, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি।

নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক প্রবাহ হারাচ্ছে। জলাবদ্ধতা বাড়ছে। আলোদূষণের মতো নতুন দূষণও বাড়ছে। রোদের তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতা উদ্বিগ্ন করছে। এ ছাড়া বাড়ছে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও। জলবায়ু পরিবর্তনের এমন ভয়াবহ প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। প্ল্যানেট হেলথ চেক ২০২৫ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতাব্দীতে প্রলয়ংকরী হ্যারিকেন হওয়ার শঙ্কা আগের সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে, এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুম-লীয় প্রশাসন বিভাগ। এ ছাড়া, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ায় হারিকেনের শক্তি ও গতি বেড়েছে বলেও গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে গ্রিনহাউস গ্যাসের কম নিঃসারণের জন্য জীবাশ্ম জ¦ালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলেছেন গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বছরে অতিরিক্ত আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। শুধু অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকেই এসব মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটতে পারে। এ ছাড়া নতুন নতুন রোগেরও উদ্ভব হচ্ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর অস্থিতিশীলতায় মানুষের মনে এখন লুকানো ভয়: ‘কখন, কী ঘটে!’ চরম আবহাওয়া যেমনÑ খরা, বন্যা ও তাপপ্রবাহের ঘটনা বাড়ছে, যা জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য সম্পদগুলোর সহজলভ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে এবং উৎপাদনশীলতা কমাচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের এই প্রভাবগুলো মানবসৃষ্ট, যা বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হলেও এশিয়া মহাদেশে বন্যা ও ঝড়ের কারণে হতাহত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বেশি। 

পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট (পিআইকে) ইমপ্যাক্ট রিসার্চ প্রকাশিত প্ল্যানেট হেলথ চেক ২০২৫-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীর জলবায়ু স্থিতিশীলতা, জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশ এবং সহনশীলতার পরিমাপে নির্ধারিত ৯টি ‘গ্রহসীমা’ সূচকের মধ্যে সাতটি এরই মধ্যে বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করেছে। দ্য ডেইলি ডাইজেস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজ্ঞানীরা ২০০৯ সালে প্ল্যানেটারি হেলথ চেকের মানদ- তৈরি করেন। এই ‘গ্রহসীমা’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে যেখানে ৯টি সীমা নির্ধারণ করা হয়, যা পৃথিবীর জীবনব্যবস্থার সুরক্ষা দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

যেসব বিষয়ের ওপর এই সীমাগুলো নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, মিষ্টি পানির ব্যবহার, বায়ুম-লের অ্যারোসল, সমুদ্রের অম্লতা, রাসায়নিক দূষণ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস চক্র এবং নতুন উপাদান ও প্রযুক্তি (নভেল এনটিটিস)। এগুলোর সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয় মানুষকে কী করতে হবে, যাতে পৃথিবীর ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। এই সূচকগুলোর মধ্যে ২০০৯ সালেই তিনটি সীমা অতিক্রম করে যায়। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় চারটিতে। এরপর ২০২৩ সালে এবং ২০২৫ সালে নির্ধারিত গ্রহসীমা অতিক্রম করে যাওয়া সূচকের সংখ্যা পৌঁছায় যথাক্রমে ছয় ও সাতে। 

পিআইকের গবেষক বরিস সাকশেভস্কি বলেন, ‘এই মুহূর্তে অনেক সূচক স্বাভাবিক সীমার বাইরে, যার অর্থ হলো পৃথিবী একটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।’ পৃথিবীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে তিনি তুলনা করেছেন একজন রোগীর সঙ্গে, যার শরীরে উচ্চ প্রদাহ সূচক, উচ্চ কোলেস্টেরল, দুর্বল লিভার ও ফুসফুসের অবস্থাÑ সব একই সঙ্গে খারাপ হচ্ছে এবং একে অন্যকে আরও খারাপ করে তুলছে। পরিচিত পাখির গান, সন্ধ্যায় শেয়ালের ডাক, সাপ-ব্যাঙের আওয়াজ বা রাতে প্যাঁচার চিৎকার যেন সব অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। মাছের স্বাদ বদলে গেছে, খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমছে। অনেক খাবার এখন প্রাণী ও মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। 

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় বছরে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, ঢাকার এই কঠিন বর্জ্যরে বেশির ভাগই বুড়িগঙ্গাসহ নদীগুলোতে ফেলা হয়। আরও ভয়ংকর হলো পরিবেশের প্রতি মানুষের আচরণজনিত দূষণ, যা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি সংকটজনক হলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনো সময় আছে।

নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশ সচেতনতা এবং বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমে পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। পৃথিবী ধীরে ধীরে জীবন ধারণের জন্য উপযোগী পরিবেশ হারাচ্ছে, যার মূল কারণগুলো হলো বায়ুম-লের ওপর চাপ বাড়ানো, বনভূমি ধ্বংস, সুপেয় পানির সংকট এবং মহাসাগরে প্লাস্টিক-দূষণ। এই পরিবেশগত অবক্ষয় মানবজাতিসহ সব প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে, যা পৃথিবীর জীবন ধারণের ক্ষমতাকে হ্রাস করছে। 

এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস ও জলবায়ুর জন্য অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসারণকারী দেশ চীন প্রথমবারের মতো নিঃসারণ কমানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। গত বুধবার জাতিসংঘে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানান, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশটি পুরো অর্থনীতিতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসারণ ৭ থেকে ১০ শতাংশ কমাবে। 

এই ঘোষণা এল এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছে। (গত মঙ্গলবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণাকে ‘প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেন। তবে সমালোচকেরা মনে করছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্য পূরণে চীনের পরিকল্পনা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী নয়। 

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর দেশগুলোকে নতুন প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। প্রায় ২০০ দেশ এই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে এক বৈঠকে বলেন, ‘দেশগুলোকে এমন পরিকল্পনা দিতে হবে, যাতে পুরো অর্থনীতি ও সব ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং যা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’ 

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার পেছনে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাববিষয়ক বিজ্ঞানকে ‘যথেষ্ট স্পষ্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

Link copied!