ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বল্প খরচ, কম পরিশ্রম ও অধিক লাভের কারণে এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক কৃষক। খোলা জায়গা, পতিত জমি, ছাদ ও বাড়ির আঙিনায় সারি সারি বস্তায় আদা চাষ করছেন তারা।
আদা ভেষজ ও মসলাজাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল, যা রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ব্যবহারের পাশাপাশি ঔষুধশিল্পেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জানা গেছে, একেকটি বস্তায় ১৫ থেকে ২০ কেজি বেলে-দোআঁশ মাটি, জৈব ও রাসায়নিক সার এবং দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে তিনটি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি বস্তায় খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতিটি বস্তা থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আদা ২০০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনা ও ছাদে সারি সারি বস্তায় সবুজ সতেজ আদা গাছ। কৃষকরা নিয়মিত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৪ হেক্টর বেশি। এ পদ্ধতিতে খরচ ও রোগবালাই তুলনামূলক কম হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বস্তা সহজে সরিয়ে নেওয়া যায়।
মোগড়া এলাকার গৃহিণী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘গত বছর শখের বসে ৭টি বস্তায় আদা লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এবার কৃষি অফিসের সহায়তায় সাড়ে ১৫ শতাংশ জমিতে ১ হাজার বস্তায় চাষ করেছি। এর মধ্যে ৫০০ বস্তা আমার, বাকি ৫০০ বস্তা দিয়েছে কৃষি অফিস। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আশা করছি অন্তত ২ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারব।’
স্থানীয় কৃষক ইব্রাহিম ভূঁইয়া লিটন জানান, ‘দুই বছর ধরে বস্তায় আদা চাষ করছি। এ মৌসুমে প্রায় ৪০০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। খরচ কম, পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। বাজার দর ভালো থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হবো।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন নেই এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষতির ঝুঁকি কম। রোপণের প্রায় ৮ মাস পর ফলন পাওয়া যায়। কৃষকদের সার, ঔষধ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং মাঠকর্মীরা নিয়মিত বাগান পর্যবেক্ষণ করছেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন