ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

চাঁদপুরে আ.লীগকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম
কাজী আশরাফ রিপন, বিল্লাল হোসেন মাল ও বারেক খান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গত বছরের ৫ আগস্টের পর চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ইউনিয়ন বিএনপি এবং যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও আশিকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফ রিপন, সহসভাপতি বিল্লাল হোসেন মাল ও ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি বারেক খানের বিরুদ্ধে স্থানীয় অন্যান্য নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে রয়েছে দলীয় নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ।

সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে এবং বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রয়েছে প্রকাশ্যে অভিযোগ। তারা পতিত হাসিনা সরকারের লোকদের কাছ থেকে বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর নানা সুবিধা নিয়ে এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

খোঁজ নিয়ে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর ৫ আগস্টের পূর্বে বিএনপি নেতা রিপন, বিল্লাল মাল ও যুবদল নেতা বারেক খান আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তাদের পরিবারের অনেকেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা। ৫ আগস্টের পরে তারা মামলা বাণিজ্য করতে গিয়ে বিএনপির কর্মীদেরও হয়রানি করেছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিপন এক সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার চাচা তাফাজ্জল কাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। ফুফাত ভাই কাদির মিজি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং ভাতিজা মামুন কাজী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য।

সহসভাপতি বিল্লাল হোসেন মাল বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি ইউপি সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায়, যার ফলে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের লোকদের নানা সুবিধা এবং মামলা থেকে বাঁচিয়ে রাখার মুরুব্বিয়ান করেন তিনি।

ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি বারেক খানের আপন ভাই ফারুক খান ওরফে শুক্কুর খান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক। চাচাত ভাই সাদ্দাম খান নিষিদ্ধ সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। রুবেল খানও তার চাচাত ভাই। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক।

ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রার্থী শাকিল আহমেদ জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পরে ইউনিয়নের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন রিপন, ইউপি সদস্য বিল্লাল ও বারেক খান। তাদের সহযোগী হলেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান (সুমন), ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বকুল সরকার ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি হৃদয় মালসহ বেশ কয়েকজন।

ইউনিয়নের সাধারণ নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নামধারী এসব নেতারা ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইউনিয়নের সরকারি টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও উন্নয়নকাজের ভাগবাঁটোয়ারা তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া গেল কোরবানির ঈদে গরুর বাজার থেকে উত্তোলন করা টাকা বকুল সরকার নিজ দলের নেতা আশিকুর রহমান ও বারেক খান বারিসহ আরেকজনের কাছ থেকে ঠেক দিয়ে নিয়ে যান। এই বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গড়ায় জেলা নেতাদের কাছে।

এ ছাড়াও রিপন সিন্ডিকেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে গরুর বাজার ইজারা পাওয়া জামায়াত নেতার কাছ থেকে নিয়ে যায়। ওই জামায়াত নেতাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন ও মারধর করে।

বর্তমানে তারা ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি বরাদ্দসহ সকল কাজের নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা অঘোষিতভাবে সরকারের জনপ্রতিনিধি। তাদের এই ধরনের কাজের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বকর মানিককে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতাদের কোনো নির্দেশনা মানেন না এই সিন্ডিকেট। তাদের কারণে সরকারি দপ্তরের লোকজন আছেন বেকায়দায়।

পাশের রামপুর ইউনিয়নের আবুল ব্যাপারী ও মৈশাদি ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শুধুমাত্র আশিকাটি ইউনিয়ন নয়, আমাদের ইউনিয়নে বাড়ির রাস্তায় মাটি কাটার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে গেলে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির নাম বলে। পরিস্থিতি কী অবশ্যই বুঝতে পারছেন!’

অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী রিপনের বক্তব্যের জন্য দুই দিন একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সহসভাপতি বিল্লাল হোসেন মাল বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছাড়াও জনপ্রতিনিধি। আমার কাছে আওয়ামী লীগ, জামাত, জাতীয়পার্টিসহ সব দলের লোকই আসে। সবার সমস্যাই আমার দেখতে হয়। তবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করার কাজে নাই। কেউ যদি বলে থাকে তাহলে সঠিক না। ইউনিয়নের মামলা, আসামিসহ সব বিষয়ে কাজ করেন সভাপতি ও সেক্রেটারি। তারাই আসামিদের নাম দেন এবং দলীয় নির্দেশনা পালন করেন। আমাকে কোনো বিষয়ে ডাকেন না।’

ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি বারেক খান বারী বলেন, ‘আমার বিষয়ে আওয়ামী লীগ লোকদের সাথে নিয়ে কাজ করার যে অভিযোগ, তা সত্য নয়। আমার ভাই যুবলীগ করে সত্য। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমার বাড়ির পাশের চাচাত ভাই। অন্য কোনো কাজে আমি জড়িত না।’

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এম. এ. ইউসুফ মিন্টু মিয়া বলেন, ‘রিপন, বিল্লাল মাল ও বারেক খানের বিষয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে সব বিষয়ে আমি বলতে পারব না। সাধারণ সম্পাদক রিপন আগে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। শিবির করেছে কি না জানি না। তবে তিন জনের পরিবারে আওয়ামী লীগের পদধারী লোকজন আছে। কোরবানির বাজারের ইজারা টাকা নিয়ে সমস্যা হয়, তা জেলা নেতাদের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। সেটি নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না জানি না। তবে আমি আওয়ামী লীগের আমলে ১৭ মামলার আসামি। জেলা নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের লোকদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স। তাদের কোনো বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না। দলের কোনো কর্মী ও সমর্থকে হয়রানির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’