ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে কিংবা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে বিএনপি রাজপথে নামতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কাদেরনগরের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হুমাম কাদের বলেন, ‘ইন্টেরিম সরকারের যেসব দুর্বলতা আমরা চিহ্নিত করেছি, সেগুলো শুধুমাত্র একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সংশোধন সম্ভব। বর্তমান সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের হয়ে কথা বলার ম্যান্ডেটও হারিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দ্বিধায় রয়েছে—এখন সবকিছুতে নির্ভরতা সেনাবাহিনীর ওপর। অথচ সেনাবাহিনী তো ব্যারাকে ফিরবে, পুলিশকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। এই বাস্তবতায় দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর সেজন্য প্রয়োজন হলে আন্দোলনেই যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা যখন সমালোচনার ঊর্ধ্বে চলে যান, তখন তারা যা ইচ্ছে তাই করেন। সাংবাদিকদের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরা, যাতে তারা সঠিক পথে ফেরে। গত ১৭ বছরে সাংবাদিকরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা নজিরবিহীন। সাংবাদিকদের কাজের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি স্বচ্ছতা ফিরে পাবে—এই আশাই করি।’
রাঙ্গুনিয়ার স্থানীয় উন্নয়ন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়ায় এনজিও ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই করেননি। তার নামে অন্তত ২২টি এনজিও রয়েছে বলে শুনেছি। পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে যত টাকা লুট হয়েছে, তা দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার ২০ বছরের খরচ চালানো যেত। এসব তদন্ত হওয়া উচিত। মুরুব্বিরা বলেন, এখানকার প্রধান সড়ক আমার বাবাই করেছেন। তাহলে হাছান মাহমুদ কী করেছেন? কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণ, বেকারদের কর্মসংস্থানসহ প্রকৃত উন্নয়নে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিএনপির স্থানীয় গ্রুপিং নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে সরকার বিএনপির প্রার্থীদের বাতিল করার কৌশল নিয়েছিল। এজন্য আমরা প্রতিটি আসনে তিনজন করে প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছিলাম, যা কিছুটা বিভক্তি তৈরি করেছে। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক হলে সবাই প্রতীকের পেছনে এক প্লাটফর্মে আসবে—আমি তা বিশ্বাস করি।’
তারেক রহমান সম্পর্কে হুমাম কাদের বলেন, ‘জিয়া পরিবার নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আমাদের নেত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তারেক রহমানকে দেশছাড়া করা হয়েছে। আমি একাধিকবার বলেছি, ভাইয়া ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধ নিতে হবে। কিন্তু তিনি বলেছেন—হুমাম, মাথা ঠান্ডা রাখো। যারা জুলুম করেছে, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। তিনি আসলেই ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’
নিজ পিতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার বাবার আগে 'মরহুম' বললেও, আমি বলি তাকে বিচার প্রক্রিয়ার নামে হত্যা করা হয়েছে—একটি জুডিশিয়াল কিলিং। আমরা চাই, এটা আদালতেই প্রমাণ হোক।’
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতা শওকত আলী নূর, সৈয়দ ফজলুল করিম মিনা, ইলিয়াস সিকদার, হেলাল উদ্দিন শাহ, নুরুল ইসলাম, মাকসুদুল চৌধুরী মাসুদ, ভিপি আনছুর উদ্দিন, যুবদল নেতা মো. ফারুকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সৈয়দ মো. সাবেরুল ইসলাম প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :