চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে ‘হাজার দুয়ারি’ নামে পরিচিত। শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যালয়টি। ১৯০৬ সাল একশ বছরের বেশি সময় আগে জমিদার নফল চন্দ্র পাল চৌধুরী দামুড়হুদা উপজেলা সদর থেকে অন্তত ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নাটুদা গ্রামে নিজ সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যালয়টি।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, জমিদার নফল চন্দ্র পালের পতœী রাধা রানীর মানবদরদি ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে খ্যাতি ছিল। এ অঞ্চলের দরিদ্র অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার বাসনা থেকেই স্বামীকে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার পরামর্শ দেন তিনি।
পরে ১৯০৬ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মাটির বেশ গভীর থেকে ৪৫ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল গাঁথা হয়। ওপরের দেয়ালের পুরুত্ব ২৫ ইঞ্চি। ভবনের প্রতিটি ইটে জমিদার নফল চন্দ্র পালের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করে লেখা আছে।
জমিদারের স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষা করতে তারই নামানুসারে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় শ্রী রাধা রানী ইনস্টিটিউশন। প্রথমে দক্ষিণমুখী কয়েকটি কামরার বিশালাকৃতির একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনের একটি কক্ষ ছাত্রাবাস হিসেবে রেখে অন্যগুলোতে একাডেমিক কার্যক্রমের শুরু করা হয়।
বিদ্যালয়টি চারতলা বিশিষ্ট হওয়ার কথা ছিল। প্রথম তলায় ২৫০টি দরজা এবং ওপরের তিন তলায় আরও ৭৫০টি দরজা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকায় বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে হাজার দুয়ারি নামে পরিচিতি পায়।
কিন্তু ভবনের নির্মাণকাজ প্রথম তলা সম্পন্ন হওয়ার পর এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের বড় ভবনের কাজ থমকে যাওয়ায় এই ভবন প্রত্যাশামতো হাজার দুয়ারে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এরপরও লোকজন একে হাজার দুয়ারি ভবন বলেই জানে।
জানা গেছে, এ অঞ্চলের জমিদার পরিবারগুলো দেশ বিভাগের আগে-পরে ভারতে চলে যায়। এটাকে ভবনের কাজ থেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। স্থানীয় সবার প্রচেষ্টায় ১৯৫৮ সালে একতলা ভবনের ছাদ নির্মাণ করে আবার ক্লাস শুরু হয়। ছোট একটি ভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে দেশ বিভাগের পর হিন্দু শিক্ষকরা দেশ ত্যাগ করায় প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল।
এরপর বিদ্যলয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে পান একই উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের সুরাত আলী। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান উন্নত হয়। একসময় স্কুলটির নামকরণ করা হয় নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০৯ সালে কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। এই বিদ্যালয় থেকে প্রথম ব্যাচ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় ১৯১১ সালে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে বহু ছাত্র এসে মেসে থেকে এই শিক্ষায়তনে লেখাপড়া করে। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৯ একর ১২ শতক। স্কুলটির পূর্বে সুশীতল ছায়াঘেরা একটি আমবাগান এবং সামনে খেলার মাঠ রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন