প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর ২ নং গেট সংলগ্ন এলাকায় বিকাল পাঁচটার দিকে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
চুয়েট শিক্ষার্থীদের সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইইউসি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন। তারা জড়ো হয়ে নগরীর ২ নং গেইট এলাকা অবরোধ করেন। এ সময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘২৪-এর বাংলায়, ডিপ্লোমা কোটার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, প্রকৌশল সমাজ জেগেছে’, ‘১,২,৩, ৪ ডিপ্লোমা তুই কোটা ছাড়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
জানা যায়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে আজ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে এগিয়ে গেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। পুলিশের লাঠি চার্জ, টিয়ারশেল ও জলকামানে আহত হন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মতে, এই হামলার দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও। এরই প্রতিবাদে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও ৫ দফা ঘোষণা করেন।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ইন্টেরিমের গায়েবানা জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত চুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ইন্টেরিম সরকারের পুলিশ আজ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আজ শাহবাগে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থী ছাড়াও চুয়েটিয়ানদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ইন্টেরিম সরকারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।’
যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহি আল ওয়াহিদ বলেন, ‘আজকের এই ঘটনা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারবে না। আমরা প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাব। সরকারকে আমাদের দাবি মানতে হবে এবং জুলুমের জবাব দিতে হবে। শীঘ্রই প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের পাঁচ দফা মেনে নিতে হবে। তবেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’
এ সময় তারা ৩ দফার পরিবর্তে নতুন করে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিসমূহ হলো: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলার জন্য ক্ষমা চেয়ে জবাবদিহি করতে হবে; পূর্বে গঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক প্রতিনিধি ও আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে তিন দফা দাবি দ্রুত নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি এবং তিন উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবেেএবং আন্দোলনকালীন সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, কোনোপ্রকার পুলিশি হামলা বরদাস্ত করা যাবে না; প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকিদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে; এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ডিসি মাসুদকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরেই চাকরিক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের বৈষম্যের প্রতিবাদে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চুয়েটসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পূর্বে ঘোষিত তাদের দাবিসমূহ ছিল: নবম গ্রেডে ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ, দশম গ্রেডকে কোটামুক্ত করে বিএসসিদের জন্য সুযোগ করে দেওয়া এবং বিএসসি ছাড়া যেন কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার না করতে পারে তা নিশ্চিত করা।