চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ‘পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে’ মা ও তার প্রেমিক মিলে একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (০৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ভূজপুর থানার নারায়ণহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইদিলপুর বাউদ্দার পাড় এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত কামরুল হাসান কাউসার (২০) ওই এলাকার দুবাই প্রবাসী কামাল ভূঁইয়া ওরফে মনার একমাত্র পুত্র।
এ ঘটনায় নিহতের নানি ফরিদা বেগম বাদী হয়ে ভূজপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ কাউসারের মা হামিদা বেগমকে আটক করেছে এবং মূল আসামি সিএনজিচালক মো. করিম পলাতক।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ৫ অক্টোবর (রোববার) রাতে হামিদার দুই মেয়ে নানার বাড়ি বেড়াতে যায়। সেদিন রাতে কাউছার জানায় সে ঘরে থাকবে না, কিন্তু পরে ঘরেই থেকে যায়। গভীর রাতে মা হামিদা ও করিমকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে কাউসার। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে মা ও প্রেমিক মিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে কাউসারকে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সকালে নিজ ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় কাউসারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, হামিদা বেগম দীর্ঘদিন ধরে করিম নামের এক সিএনজিচালকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত ছিল। করিম ভূজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভূজপুর গ্রামের মৃত আইয়ুব মাঝির ছেলে এবং দুই সন্তানের জনক।
নিহতের নানি ফরিদা বেগম বলেন, ঘটনার দিন ভোরে করিম সিএনজি নিয়ে এসে বলে কাউছার অসুস্থ। ঘরে গিয়ে দেখি নাতিকে মশারির ভেতর ঢেকে রাখা। তার শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় পোড়া দাগ ছিল। বিদ্যুতের শক দিয়ে পোড়ার মতো।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে হামিদা সবসময় করিমের সিএনজিতে ঘুরে বেড়ায়। তার সাথে আমার মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তার এই পরকীয়ার প্রতিবাদ করত আমার নাতি। সে কারণে আজ আমার একমাত্র নাতিকে হারালাম। আমি হামিদা ও করিমের ফাঁসি চাই।
নিহতের বাবা প্রবাসী কামাল ভূঁইয়া বলেন, আমি ২১ বছর ধরে প্রবাসে। করোনার সময় দেশে আসার পর করিমকে বাড়িতে আসতে দেখেছি। বিষয়টি তখনই সন্দেহ হয়েছিল। আত্মসম্মানে কাউকে কিছু বলিনি। আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেছিল করিম নাকি তাদের আত্মীয়। এখন বুঝছি, সে-ই আমার ছেলের ঘাতক। আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
ঘটনার পর এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে নিহতের বাড়িতে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানায়। স্থানীয়দের ভাষায়, একজন মা কীভাবে নিজের সন্তানকে হত্যা করতে পারে—এটা ভাবতেও অবাক লাগছে।
ভূজপুর থানার ওসি মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হামিদা বেগমকে আটক করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তার প্রেমিক করিমকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।