ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

কয়েকজনের আপত্তিতে আটকে আছে ছয় লেনের কাজ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
ঢাকা-সিলেট ৬ লেন মহাসড়ক। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ নকশাজনিত জটিলতা ও ভূমি অধিগ্রহণ বিলম্বে হবিগঞ্জের বাহুবল অংশে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল জেভি এখনো পূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। এর ফলে আঁকাবাঁকা এই মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা, আর দীর্ঘদিন ধরে চলমান খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাহুবল উপজেলার মর্দিলং ব্রিজ থেকে সদরঘাট গেট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশের কাজের দায়িত্ব পেয়েছে সিপিসিএল জেভি। এই অংশটি অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ ও বাঁকযুক্ত হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা সোজা করার নকশা তৈরি করে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে কয়েকজনের আপত্তি এবং একটি মন্দির রক্ষার দাবিতে কাজ আটকে যায়।

সম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা তপন পাল বলেন, একজনের স্বার্থে রাস্তা বাঁকা রাখার চেষ্টা চলছে বলে শুনেছি। অথচ রাস্তাটি বাঁকা থাকলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। পূর্বদিকে নিলে মানুষের বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, পশ্চিমদিকে নকশা অনুযায়ী নিলে রাস্তা সোজা হবে এবং দুর্ঘটনা কমবে। পূর্বদিকে নিলে আমাদের স্কুল, ঈদগাহ, মক্তব সব ভেঙে যাবে।

স্থানীয় ইউনুছ মিয়া বলেন, আমরা কয়েক ভাই মিলে মাত্র কয়েক শতাংশ জমিতে বসবাস করি। পূর্বদিকে রাস্তা গেলে আমাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ হবে, আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ব।

রতন পাল বলেন, ‘যে মন্দির বা বটগাছটি রক্ষা করার জন্য রাস্তাটি আরও বাঁকা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেটি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মন্দির নয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে আমাদের আলাদা মন্দির তৈরি করে দেওয়া হবে। অপরদিকে পূর্ব পাশে রাস্তা গেলে আমাদের বাড়িঘর থাকবে না। আমাদের যদি বাড়িঘরই না থাকে তাহলে মন্দির দিয়ে কী করব। পরিবার পরিজন নিয়ে তো মন্দিরে বসবাস করতে পারব না। মানুষ যদি না থাকে তাহলে মন্দিরে কে পূজা দেবে। আমরা চাই রাস্তাটি সোজা হোক। দুর্ঘটনা হ্রাস পাক। পাশাপাশি মানুষের বাড়িঘর রক্ষা পাক।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল নিয়োজিত প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, মহাসড়কের নকশা করা হয়েছে সার্বিক বিবেচনায়। এখানে পশ্চিম পাশে হাওর এলাকা। তাই সেদিকে ক্ষতি কম হবে। আর পূর্বদিকে ঘনবসতি সেদিকে অধিগ্রহণ করলে ক্ষতি বেশি হবে। তা ছাড়া রাস্তাটি সোজা করতে হলে পশ্চিম দিকেই যেতে হয়। পূর্বদিকে গেলে অধিক পরিমাণ জমি লাগবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই মূলত নকশাটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্যাকেজটি হচ্ছে মর্দিলং ব্রিজ থেকে সদরঘাট গেট পর্যন্ত। তার মধ্যে মর্দিলং থেকে পুটিজুরির অর্ধেক পর্যন্ত এসে যৌথ জরিপ থেমে আছে প্রায় ৬ মাস ধরে। এ সময়ে আমাদের প্রজেক্ট প্রায় শেষ হয়ে যেত। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে আমাদের সময় গণনা শুরু হয়েছে। এর ২৭০ দিনের মধ্যে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ২ বছর হতে চললেও আমরা এখনো জমি পাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজটি করার জন্য ২০০ লোক দরকার। সেই লোকবল বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছি, যন্ত্রপাতি এনে ফেলে রেখেছি। কন্ট্র্যাক্ট ভায়োলেশনও হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সড়ক বিভাগের খরচ বাড়বে। কারণ যত দিন যাবে ততই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। জিনিসপত্রের দাম অনুযায়ী আমাদের চুক্তির টাকাও বাড়বে। এটি চুক্তিতেই বলা আছে। রাস্তার কাজ বিলম্ব হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। দুর্ঘটনাও বাড়ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেন কাজের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ গবেষণার পর রাস্তার নকশা তৈরি করা হয়েছে। চাইলেই সেই নকশা পরিবর্তন করা যায় না। বাহুবল উপজেলার কল্যাণপুর মৌজায় একটি মন্দির পড়েছে রাস্তায়। সেটি আমরা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার জন্যও প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু মন্দিরটি যে বাড়িতে পড়েছে তারা বাধা দেওয়ার কারণে রাস্তাটির কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়েছি। জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়ার জন্যও লিখিত দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পাইনি।

তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। আর আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। জমি বুঝে পাওয়ার আগে কাজ করা সম্ভব নয়। কাজ যত বিলম্ব হবে তত মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান জানান, হবিগঞ্জ অংশে ৮১ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৩০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪টি কেস সম্পন্ন হয়েছে, পুটিজুরি অংশেও কাজ চলছে। খুব শিগগিরই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে এবং মানুষের দুর্ভোগও লাঘব হবে।