চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আসন চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখন সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নীরবতা এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে অবস্থানের কারণে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নতুনভাবে মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। দলটির মনোনয়ন পেতে একাধিক পরিচিত মুখ মাঠে সক্রিয়। এদের মধ্যে রয়েছেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত মোস্তাফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু নিপার চৌধুরী এবং ইলিয়াছ কাঞ্চনসহ আরও কয়েকজন নেতা।
দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভোটারদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক—এই তিন দিক থেকেই তারা এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড়ে বিএনপির ভেতরে তৈরি হয়েছে চাপা প্রতিযোগিতা। কে পাবেন কেন্দ্রীয় মনোনয়ন, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। কেউ ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কেউবা মাঠে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, দলীয় কোন্দলের সুযোগে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচার জোরদার করেছেন।
এদিকে, আকর্ষণীয় এক বিকল্প হয়ে উঠেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা জুবাইরুল আলম মানিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে পরিচিতি পাওয়া এই তরুণ নেতা ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে জোরালো অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা এরফানুল হক হালিমকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালাচ্ছে। ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এস এম শাহজাহান এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ একরাম চৌধুরীও মাঠে নেমেছেন। তবে গণঅধিকার পরিষদ এখনো তেমন কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনটি রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী। একসময় বিএনপি এই আসনে আধিপত্য বিস্তার করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। ফলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে কার্যকর প্রার্থী নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, সঠিক প্রার্থী বাছাই ও কৌশলগত পরিকল্পনা থাকলে বিএনপি আবারও এই আসনে শক্ত অবস্থান নিতে পারে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারা তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছেন। এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
আসনটিতে মোট ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে আনোয়ারায় ১১টি এবং কর্ণফুলীতে পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটারের মধ্যে আনোয়ারার ভোটার সংখ্যাধিক্য থাকায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান দলগুলোর প্রার্থী নির্বাচনে আনোয়ারাকেন্দ্রিক নেতৃত্বই প্রাধান্য পেতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন