চুয়াডাঙ্গার বেগমপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্বামী ও শাশুড়ির দাবি করা দুই লাখ টাকা না পেয়ে স্ত্রীর শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দিয়েছেন স্বামী রবিউল বিশ্বাস। বর্তমানে তিন মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন নির্যাতনের শিকার সুলতানা পারভীন (২৫)।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সুলতানা পারভীন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নগরবাকা গ্রামের রাজমিস্ত্রি রবিউল বিশ্বাসের স্ত্রী। দুই পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেই তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিল এই দম্পতির। তাদের সংসারে মাস তিনেক আগে জন্ম নেয় একটি কন্যাসন্তান।
সুলতানার ভাই সোহেল জানান, রবিউলের ছোট ভাই মাসুদ সম্প্রতি বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এ জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে সুলতানার ওপর দীর্ঘদিন ধরে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় বিগত তিন মাস ধরে সুলতানাকে নিয়মিতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন তার স্বামী ও শাশুড়ি।
ঘটনার দিন, গত ২১ জুলাই সকালে, কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে স্বামী রবিউল ও তার মা মিলে সুলতানার শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দেন। এতে তার ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ঝলসে যায়।
পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে সুলতানাকে প্রথমে কুষ্টিয়ার হালসা এলাকার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ভুক্তভোগী সুলতানা পারভীন বলেন, দেবর বিদেশে যাবে এই জন্য আমার বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা আনতে বলে। আমার পরিবার খুবই দরিদ্র। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার গায়ে ফুটন্ত ভাত পেছন থেকে ঢেলে দেন স্বামী ও শাশুড়ি। এর আগেও আমাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করত তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তম্ময় বলেন, সুলতানার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত কি না- তা নিশ্চিত হতে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ওসি মো. মোমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুলতানার পরিবার জানিয়েছে, তারা খুব শিগগিরই মামলা দায়ের করবেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের কাছে বিচার ও নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :