ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় নিষিদ্ধ চায়না জালে খাল-বিল ছয়লাব

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন খাল-বিলে নিষিদ্ধ ‘চায়না ম্যাজিক জাল’ দিয়ে চলছে অবাধে মাছ শিকার। ছবি- সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে নিষিদ্ধ ‘চায়না ম্যাজিক জাল’ দিয়ে চলছে অবাধে মাছ শিকার। এতে করে প্রানীজ আমিষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা বিল, পদ্মগঙ্গা বিলসহ বেশ কিছু বিল ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় নিষিদ্ধ চায়না জাল ও কারেন্ট জালে ছয়লাব হয়ে গেছে পুরো বিল। শুধু বিল নয় খাল ও নদী- নালায় পাতা হচ্ছে চায়না দুয়ারী জাল ধরা হচ্ছে ছোট মাছ। মাছের প্রজননের এই মৌসুমে কারেন্ট ও চায়না জাল পাতার কারণে নষ্ট হচ্ছে মাছের ডিম, বন্ধ হচ্ছে মাছের প্রজনন ঘটানো এতে করে দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি  ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। নিষিদ্ধ এই চায়না জালকে ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয় এই চায়না দুয়ারী জালকে। নাম চায়না দুয়ারী হলেও উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। মাছ ও জলজ প্রাণী বিধ্বংসী এই চায়না দুয়ারীর মাধ্যমে মাছ মারার ধূম পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার অসংখ্য মুক্ত জলাশয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলছে মাছ মারার মহোৎসব।

পানির নিচে জাল রেখে শক্ত লাঠির সাহায্যে বেঁধে রাখা হয়েছে জালের দুই প্রান্ত। ৫০- ১০০ ফুট লম্বা এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় খুব সহজেই তলিয়ে থাকছে পানির নিচে। আর এই জাল এত সূক্ষ্ম যে ছোট ছোট জাতের মাছ, এমনকি মাছের ডিমও অনেক সময় উঠে আসছে। জালগুলো হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসবিশিষ্ট, যা কপাটের মত কাজ করে। এতে মাছসহ যেকোন জলজ প্রাণী একবার ঢুকে পড়লে জালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। 

জানা গেছে, এক রাতে এই জালে যে পরিমাণ মাছ উঠে তা অন্য কোনো জালে উঠে না, সেই তুলনায় পরিশ্রম তেমন করতে হয় না এবং জালগুলো সহজলভ্য হওয়ায় এই জালের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছ ধরার পাশাপাশি মাছের ডিম ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা হচ্ছে এই নিষিদ্ধ জালের মাধ্যমে। বিলগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পুটি, কই, টেংরা, টাকি, বেলে, ফোলই, জিয়েল, শিং, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ যা শিকার করতে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছে মাছখেকোরা। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় জাল পাতা সকালে মাছ ভর্তি জাল ঝেড়েই বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে। আয় করেন হাজার হাজার টাকা। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হায়াত আলী জানান, ‘যে সকল লোকেরা মাছ বিক্রি করে তাদের অধিকাংশের দুয়ের অধিক চায়না দুয়ারী জাল রয়েছে যা তারা বিভিন্ন  বিলে পেতে মাছ ধরে পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদার ডুগডুগি বাজারসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে চায়না দুয়ারী জাল বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। এভাবে অবাধে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে দেশি মাছ ধরায় দেশি মাছের উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এছাড়াও দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দৃশ্যমান তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মাছখেকোদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন তারা। অতিসত্বর সংশ্লিষ্ট দপ্তর চায়না দুয়ারী জালের ক্রয়-বিক্রয় প্রতিরোধপূর্বক মাছখেকোদের শাস্তির আওতায় না আনলে নিকট ভবিষ্যতে দেশি মাছের উৎপাদন একেবারেই কমে গিয়ে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহে দামুড়হুদায় বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জাল, ধ্বংস করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে।’