দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর বাজারের মাছ হাটি থেকে সবজি হাটি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার খানা-খন্দকসহ গর্তে ভরা রাস্তায় বিপাকে পড়েছেন বাজারে আসা পথচারীরা।
রাস্তার দুই পার্শ্বের সবজির দোকানগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভাঙা রাস্তায় ক্রেতা কমেছে। বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। বৃষ্টি নামলে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, সল্প প্রশস্তের রাস্তার বিভিন্ন স্থানের কার্পেটিং উঠে গেছে। খানাখন্দকসহ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে বৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তে জমেছে পানি।
বাজার করতে আসা ক্রেতারা এনজিও কর্মী রাকিব হাসান বলেন, পৌরসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে খানা-খন্দকসহ গর্তে পরিণত হওয়ায় রিকশাভ্যান তো দূরের কথা মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাজুড়ে পানি জমে থাকাসহ কাদাপানিতে ক্রেতাসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পাইকারি বাজার থেকে পৌর বাজারে সবজি বহনকারি রিকশাভ্যান চালক আব্দুর রহমান বলেন, সবজি নিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় না, শুধুমাত্রা এই কয়েক’শ মিটার রাস্তা পাড়ি দিতে তার চেয়ে কয়েকগুণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রায়ই সময় রাস্তার গর্তে পড়ে ভ্যানের চাকা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
ফুলবাড়ী নাগরিক কমিটির আহবায়ক শ্রমিক নেতা মো. হামিদুল হক বলেন, ব্যস্ততম পৌর বাজারের রাস্তাটি মরহুম হবিবর রহমান সরকার পৌর চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নির্মাণ করা হয়। এরপর পাঁচবার চেয়ারম্যান ও মেয়র বদল হলেও কারোই নজর পড়েনি এই গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল রাস্তাটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দিকে। ফলে বছরজুড়েই পথচারি ও ক্রেতাদের এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ অবর্ণনীয় হয়ে যায়।
সবজি ব্যবসায়ী হারুন উর রশীদ বলেন, ‘পৌর বাজার এলাকায় আগে অনেক মানুষের সমাগম হতো। কিন্তু এখন ভাঙা রাস্তার কারণে মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া তেমন আসে না। আগে প্রতিদিন দোকানে যে পরিমাণ টাকার মালপত্র বিক্রি হতো। এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হয় না।’ বৃষ্টি আসলে দোকান বন্ধ রাখতে হয়।
চায়ের দোকানদার উত্তম কুমার বলেন, ‘আগে বাজারে অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল। শুধু রাস্তার কারণে লোকজনের আসা-যাওয়া কমে গেছে। আগে প্রতিদিন চা-পান মিলে গড়ে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন এক হাজার টাকারও ব্যবসা হয় না। আর বৃষ্টি হলে সড়কের গর্তে পানি জমে থাকায় ক্রেতা না আসায় ৫০০ টাকাও আয় হয় না। আর বৃষ্টি হলে ক্রেতার অভাবে দোকান বন্ধ রাখতে হয়।’
সুজাপুর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে হানি বলেন, ভাঙাচোড়া রাস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কোনো মতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে যায়। এ কারণে এ রাস্তা পরিবর্ততে অর্ধ কিলোমিটার পথ ঘুরে শ্মশান ঘাটের বড় ব্রিজ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. লুৎফুল হুদা চৌধুরী লিমন বলেন, এই মুহূর্তে ওই রাস্তা নির্মাণ কিংবা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই পৌরসভার। তবে আরইউপিজিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসে রাস্তাটির কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।