ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বিএনপির দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের কারণে শুক্রবার বিকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পৌরসভা, ওয়াপদা মোড় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনুর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা দুজনই বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
বিএনপি ২৩৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এই আসনটির মনোনয়ন স্থগিত রেখেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ৩টার দিকে শামসুদ্দীর মিয়ার সমর্থকরা ওয়াপদার মোড় এলাকায় এবং নাসিরুলের সমর্থকরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ছিল ধানের শীষ। বিকাল ৪টার দিকে নাসিরুলের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদার মোড় এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অপরদিকে শামসুদ্দীনের সমর্থকরা কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়। বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে এলে দুপক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তবে নাসিরুলের সমর্থকরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় শামসুদ্দীনের সমর্থকরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়।
এসময় খবর পেয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিব্বির আহমেদ, বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে যান এবং দুপক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে হামলায় এক পর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, এরপর নাসিরুলের সমর্থকরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সে সামনে থাকা অন্তত ১৫টি মোটরসাইলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ওই ভবনের নিচতলায় থাকা শামসুদ্দিন মিয়ার কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ছাড়া আশপাশে বিভিন্ন দোকানে হামলা করে ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের ইট-পাটকেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মুখে পুলিশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এলেও তারা বাধা ও হামলার মুখে ফিরে যান। এ ঘটনায় বিএনপি নেতারা একে অপরকে দোষরূপ করেছেন।
বিএনপি নেতা শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, “প্রশাসনকে জানিয়ে আমরা ওয়াপদার মোড়ে অনুষ্ঠান করছিলাম। এ সময় নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে, আমার কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১৫ সমর্থক আহত হয়েছেন। কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।”
বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের ওপরে উঠে আমার সমর্থদের ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করে।”
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। তখন ফায়ার সার্ভিস পুনরায় এসে আগুন নেভায়। দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন