সোনাগাজীতে সিএনজি-অটোরিকশায় ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের নামে চলছে নৈরাজ্য। উপজেলা প্রশাসন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না চালকরা। এতে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা থাকা সত্ত্বেও অনেক চালক ইচ্ছামতো ভাড়া দাবি করছেন। কোথাও কোথাও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাত ৮টার পর থেকে ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। রাত যত গভীর হয়, ভাড়া তত বাড়তে থাকে। এতে যাত্রী-চালকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বাগ্বিতণ্ডা, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ৭২৮ নম্বর স্মারকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সোনাগাজী-ফেনী সড়কে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১০ অক্টোবর কমিটির সভায় আলোচনার ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সোনাগাজী-ফেনী-সোনাগাজী ৪৫ টাকা, মতিগঞ্জ-ফেনী-মতিগঞ্জ ৩৫ টাকা, ডাকবাংলা-ফেনী-ডাকবাংলা ৩০ টাকা, সোনাগাজী-মতিগঞ্জ-সোনাগাজী ১০ টাকা, সোনাগাজী-ডাকবাংলা-সোনাগাজী ১৫ টাকা, সোনাগাজী-ধলিয়া-সোনাগাজী ২০ টাকা, সোনাগাজী-মোল্লার তাকিয়া-সোনাগাজী ২৫ টাকা, সোনাগাজী-লালপোল-সোনাগাজী ৩৫ টাকা। তবে এসব ভাড়া কার্যকর না হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
একাধিক ভুক্তভোগী যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, তবুও চালকরা মানছেন না। ৪৫ টাকার জায়গায় ৫০-৬০ টাকা দাবি করেন। না দিলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। প্রতিদিন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি চালক বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস সংকট আর খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি। নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি চালালে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) সোনাগাজী শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সজীব বলেন, ‘সিএনজি চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন, যা মোটেও ঠিক নয়। প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া মানা উচিত। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিক এবং যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত হোক।’
সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নুর নবী বলেন, সোনাগাজী-ফেনী সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে সিএনজি চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ না করায় সড়কে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি ও আইনগত পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ২০২৪ সালের শেষের দিকে সিএনজি অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়া তালিকা জারি করেছে। তবে চালকরা তা মানছেন না, যা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিষয়টি নজরে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধ করা হবে এবং যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন