ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

কাশিমপুর কারাগার থেকে ২৭ বিডিআর জওয়ানের মুক্তি

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন ২৭ জন সাবেক বিডিআর জওয়ান।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১০টায় তারা মুক্তি পান বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় কারাফটকে তাদের আত্মীয় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে সোমবার বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় ৪০ আসামির জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত। 

জানা গেছে, আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের (প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) বিচারক ইব্রাহীম মিয়া বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ৪০ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

জামিন পাওয়া ৪০ জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ থেকে পাঁচজন, পার্ট -২ থেকে ১০ জন ও হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১১ জন মুক্তি লাভ করেন। এ ছাড়া বুধবারের এই ইউনিট থেকে আরও এক বিডিআর সদস্য জামিনে মুক্তি পান। সাবেক বিডিআর সদস্যরা জামিনে মুক্তি লাভ করায়  কারা ফটকের সামনে স্বজনরা  উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

এর আগে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১৭৮ জন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ২১৮ জন‌ জামিন পেলেন। 

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট- এর জেল সুপার মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, গতকাল বুধবার বিকেলে বন্দি ২৭ সাবেক বিডিআর সদস্যের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট এরই মধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। 

অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েকশ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।

পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।