বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

গাজীপুরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, বেড়েছে বেকারত্ব ও অপরাধ

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

গাজীপুরে বন্ধ থাকা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরে বন্ধ থাকা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরে এক বছরে বন্ধ হয়েছে ১০৬টি কারখানায়, বেড়েছে বেকারত্বসহ নানা অপরাধ। সমাজের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বেকার শ্রমিকরা। কারখানাগুলোতে রয়েছে জ্বালানি সঙ্কট, ব্যাংকিং খাতে অসহযোগিতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্ডার না থাকা, কার্যাদেশ বাতিল, ঘনঘন শ্রমিক আন্দোলন, ভাঙচুরসহ বৈশ্বিক নানা সঙ্কটে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক তৈরি পোশাক কারখানা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লাখো শ্রমিক। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতে।

জানা গেছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ি জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপ। এই কারখানায় কাজ করতেন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে প্রতিষ্ঠানে প্রথম মন্দার ধাক্কা লাগে। পরে রাজনৈতিক ও ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে কারখানাটির একের পর এক ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটি বর্তমানে এক হাজার বাকি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে।

কিছুদিন আগে কেয়া গ্রুপের মালিক আব্দুল খালেক পাঠান ঋণ খেলাপীর অভিযোগে খেটে আসছেন তিন মাসের জেল। এতে শ্রমিক মজুরি, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলসহ কারখানা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহে তীব্র সংকট পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ঘনঘন শ্রমিকদের আন্দোলন, ভাঙচুরের ঘটনায় কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

কেয়া গ্রুপের মালিক আব্দুল খালেক পাঠানের দাবি, ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে যে ফরেন কারেন্সি এসেছে তা ডিপোজিট করা হয়নি। ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলো ফরেন কারেন্সি পুরোপুরি ডিপোজিট করলে কারখানা ঋণ খেলাপী হতো না। তিনি চারটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন।

এই সকল ব্যাংকের বিরুদ্ধে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে তদন্তের জন্য অভিযোগ করেন। তিনি বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তদন্তের অনুরোধ করেন।এই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মহীন হয়ে পড়েন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। কর্মচাঞ্চল্যের প্রতিষ্ঠান রূপ নেয় প্রাণহীন।

গাজীপুরে বন্ধ থাকা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু এই প্রতিষ্ঠান নয়, গাজীপুরে এক বছরে বন্ধ হয়েছে ১০৬টি কলকারখানা। এতে বেকার হয়েছেন ৭৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকোর ১৩টি, মাহমুদ জিন্স, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটাইল ফ্যাশন, ক্লাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলস, টি আর জেড গার্মেন্টস, রোয়া ফ্যাশনসসহ বিজিএমইএভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান।

বেকার এসব শ্রমিক অনেকে কাজ না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। চাকরি ছেড়ে অটোরিকশা চালনা, ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। নারী পোশাক শ্রমিকদের মধ্যেও অনেকে অন্যত্র গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

আবার অনেকে গাজীপুরে থেকে টেইলারিং, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজীপুরে শ্রমিকপল্লীতে চলছে হাহাকার। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

গাজীপুরে বন্ধ থাকা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এ ছাড়া বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ভাঙচুর, বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটান। এতে প্রায় সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের চালক, যাত্রীসহ পথচারীরা।

শুধু শ্রমিক নয়, কারখানা বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। কোনাবাড়ির জরুন এলাকার এক মুদি ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, আমি এখন দোকানের ভাড়াই দিতে পারি না, বাসা ভাড়া ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া কিভাবে চলবে, কিছুই জানি না।

এ ছাড়াও ওই এলাকার আরিফ নামের এক বাড়ির মালিক জানান, আমাদের বাসা ভাড়া দিয়ে খেতে হয়। অথচ কিছু কারখানা বন্ধের কারণে আমাদের অধিকাংশ রুম ফাঁকা থাকে।

এসি শিল্প এস্টেট ও স্টাইলিশ গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, জ্বালানি সঙ্কট নিরসনের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও কারখানা চালুর বিষয়ে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ায় অনেক শ্রমিক চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে গাজীপুরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি করছে।

মালিক-শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় ৫ হাজার কলকারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানা। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি।

Link copied!