গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার ঘটনায় নতুন করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ মামলা অনুযায়ী মোট আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৭ জন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মতিয়ার মোল্লা মামলাটি করেন।
গোপালগঞ্জ থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে-গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী (লেকু), জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতীশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশ স্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ও স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। তারা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং সরকারি কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে, যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর আহত করে।
এ ঘটনার পর গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে মোট ১৩টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় দায়ের করা হয়েছে। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মোট ১৫ হাজার ৬৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
গত ১৯ জুলাই রাতে নিহত ৪ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় ২টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি এবং টুঙ্গিপাড়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা চলা হামলা-সহিংসতায় ৪ জন নিহত হন।
পরের দিন (১৭ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ জনে। আহত হয় সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক।