ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ভরা মৌসুমে বন্ধ যমুনা সার কারখানা, দৈনিক ক্ষতি ৩ কোটি টাকা

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
সরিষাবাড়ীতে সার কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ যমুনা সার কারখানা প্রায় ২০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ভরা আমন মৌসুমে কারখানাটি বন্ধ থাকায় একদিকে ইউরিয়া সারের সংকটের আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা, অন্যদিকে তিন হাজারেরও বেশি হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, ডিলার ও শ্রমিকরা শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমানের কারখানা পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সার কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা ছাড়াও প্রায় ২০টি জেলার ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করেছে। এটি দেশের একমাত্র দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি ছিল দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া কারখানা।

প্রতিষ্ঠার শুরুতে কারখানাটি প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে- কখনো পূর্ণমাত্রায়, কখনো অর্ধেক সক্ষমতায় চলেছে উৎপাদন কার্যক্রম।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাসের চাপ কমিয়ে দিলে কারখানাটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, বিসিআইসির অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে যমুনা কারখানার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে ঘোড়াশাল-পলাশ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।

কারখানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ২০ মাসে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ফলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার বহু মূল্যবান যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে গেছে এবং মরিচা ধরেছে, যা পুনরায় সচল করতে বাড়তি খরচের আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, কারখানার তিন হাজারের বেশি দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।

মানববন্ধন শেষে কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘চেয়ারম্যান মহোদয় কারখানা ঘুরে দেখেছেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি গ্যাস সংযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারখানা চালুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে, কেবল গ্যাস পেলেই উৎপাদন শুরু হবে।’

ভরা মৌসুমে কৃষকদের কাছে ইউরিয়া সারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যমুনা সার কারখানাকে দ্রুত চালু করা গেলে কৃষি খাত সুরক্ষিত থাকবে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারেরও বিপুল ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।