ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার রায় পড়া চলছে। মামলার অন্য ২ আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল‑মামুন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই মামলার রায় পড়া শুরু করে। অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় পড়ার সময় ৩ আসামির মধ্যে আইজিপি মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আছেন। বাকি দুজন আসামি পলাতক রয়েছেন।
প্রসিকিউশন আশা করছে, রায়ে আসামিদের কঠোর শাস্তি হবে। রায়টি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষাভবন অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে হত্যাকাণ্ড, উসকানি, হত্যার জন্য অস্ত্র ব্যবহার এবং লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো গুরুতর অপরাধের জন্য। ইতিমধ্যেই মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
অভিযোগের সার-সংক্ষেপ:
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—
প্রথম অভিযোগ: ১৪ জুলাই গণভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারদের সমন্বিত হামলায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তা বাস্তবায়ন করেন বলে অভিযোগ।
তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।
চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা।
পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।
এই সব অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধেই ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’–র অধীনে বিচার করা হচ্ছে।
এদিকে, রায় ঘোষণার দিনে দেশব্যাপী শাটডাউনের ডাক দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। তবে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গণপরিবহন চালু থাকবে।



