যশোরের শার্শায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তাঁর সমাধিস্থলে গার্ড অব অনার প্রদান করেছে যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাশিপুরে অবস্থিত এই বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পরিচালক সোহেল আল মুজাহিদ।
এ ছাড়া সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শার্শা উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শেষে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছরের মতো এ বছরও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. কাজী নাজিব হাসান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নিয়াজ মাখদুম এবং শার্শা থানার ওসি আব্দুল আলিম প্রমুখ।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমান নাম নূর মোহাম্মদ নগর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মাতার নাম জেন্নাতুন্নেছা। তিনি ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পর ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন।
পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুর এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নান্নু মিয়াসহ তিন জন সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শত্রুপক্ষের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায়ও তিনি নিজের জীবনের কথা না ভেবে যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং গুলি চালাতে চালাতে সামনে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরবর্তীতে শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের মুক্ত এলাকায় তাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে।