ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ৩৭ নং মধ্য গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, অনুপস্থিতি ও অনিয়মে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত আছেন শুধু সহকারী শিক্ষিকা মোসা. সালমা আক্তার। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একত্র করে একটি কক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন।
অন্যদের মধ্যে দুইজন ছুটিতে থাকলেও সহকারী শিক্ষিকা মোসা. মুন্নী আক্তার (নাসরীন) তখনো বিদ্যালয়ে আসেননি। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টায় উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও শিক্ষকরা তা মানছেন না।
সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে বিদ্যালয়ে হাজির হন অনুপস্থিত থাকা শিক্ষিকা মুন্নী আক্তার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি অসুস্থ ছিলেন। তবে ছুটি সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি কোনো স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী দপ্তরি মো. রিয়াজ হোসেন সকালবেলা দরজা খুলে বাজারে চলে যান বলে জানিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষিকা। ফলে ওয়াস ব্লকের কেচিগেট তালাবদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ে। পরে প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তালা খুলে গেট ব্যবহার করে।
স্থানীয়রা জানান, দপ্তরির এমন অনিয়ম প্রতিদিনের ঘটনা। এমনকি শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে থাকেন না। অনেকে শুধু হাজিরা দিয়ে বাড়ির কাজে চলে যান। ফলে শিক্ষার মান দিন দিন নিচে নামছে এবং স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। এতে করে গ্রামীণ শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। একজন সহকারী শিক্ষিকা ছুটিতে আছেন এটা আমি জানি। তবে আরেকজন কেন সময়মতো আসেননি এবং দপ্তরি স্কুল চলাকালে বাজারে কেন গিয়েছেন—এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত না করারও অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শারমিন আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।