ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিদ্যালয় মাঠ, খসে পরে ছাদের পলেস্তারা!

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ১১:২২ এএম
জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে স্কুলের মাঠ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের ৮১নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র চার কক্ষে চলছে। বিদ্যালয়ে ৮১ জন শিক্ষার্থী এবং ৪ জন শিক্ষক পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষকদের জন্য, বাকি তিনটিতে চলছে পাঁচটি শ্রেণির পাঠদান।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে, তবে ভবনের সীমিত কক্ষসংখ্যা ও অপর্যাপ্ত সুবিধা শিক্ষার পরিবেশকে যথেষ্ট প্রভাবিত করছে।

দ্রুত সমস্যা সমাধান করে বিদ্যালয়টিকে আধুনিক ও মানসম্পন্ন একটি বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার দাবি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর।

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফজাল আকন বলেন, এ এলাকার এই একটি মাত্র সরকারি বিদ্যালয়। এর দুরাবস্থা চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। ওখানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশে অনেক ঘাটতি আছে।

আরেক অভিভাবক ভবানীপুর গ্রামের জালাল হোসেন ডাকুয়া বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল আছে, সুন্দর ভবন আছে, সুন্দর খেলার মাঠ আছে কিন্তু এ বিদ্যালয়টি অবহেলিত রয়ে গেছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৪৩ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে বিদ্যালয়টি। সে সময়ে বিদ্যালয়টির নামে এ জমি দান করেন ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়। ১৯৯২ সালে নির্মিত হয় চার কক্ষের বর্তমান এই একতলা ভবন। এ ভবনেই চলছে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। বর্তমানে শতাধিক শিক্ষার্থী ও ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন এ বিদ্যালয়ে।

আরও দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে গরু ছাগল বাঁধা রয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠ খানাখন্দে ভরা, খেলাধুলার অনুপযোগী। জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে স্কুলের মাঠ। মাঠে পানি থাকে ২ ফুটের বেশি যা শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ের কারণ। তাদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়, অন্যথায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। শঙ্কায় থাকেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এ ছাড়াও মাঠের দুই পাশের সংযুক্ত রাস্তার অবস্থা আরও বেহাল।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা বলে, বৃষ্টি হলে ক্লাসরুমে পানি পড়ে। মাঝেমধ্যে পলেস্তারা খসে পড়ে। আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এ ছাড়া বিরতিতে আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। কারণ মাঠে তখন হাঁটুসমান পানি থাকে। তাই রাস্তায় ঘোরাফেরা করা ছাড়া উপায় নেই।

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ হোসেন বলে, একটিমাত্র টয়লেট থাকায় টয়লেট ব্যবহার করতে সমস্যা হয়। নতুন টয়লেট হবে শুনেছি কিন্তু কাজ ১ বছর ধরে পড়ে আছে।

একজন শিক্ষক বলেন, মাঠটি খেলাধুলা করার উপযুক্ত করা দরকার। বাউন্ডারি ওয়াল না থাকলে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। তা ছাড়া ওয়াসব্লকের কাজ পরে আছে দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময়, সেটিও জঙ্গলে ঘিরে আছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। প্রথমত, একটি ভবন দরকার, বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে শিক্ষার্থীদের তথা বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তৃতীয় জরুরি বিষয় হচ্ছে, মাঠটি বালু দিয়ে ভরাট করা এবং ওয়াসব্লকের কাজ সম্পন্ন করা। এ ছাড়া শিক্ষার অনুপযোগী হয়ে পড়বে বিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।