ঝিনাইদহের মহেশপুরে নবজাতক বিক্রির ঘটনায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের এক নার্সকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি শিশুর দত্তক দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করেছিলেন।
বুধবার (১ অক্টোম্বর) বিকেলে হাসপাতালটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেলেনা আক্তার নিপার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়, সুমাইয়া খাতুন নামে এক নারী দেনার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে সদ্যপ্রসূত ছেলে সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও ৬৫ হাজার টাকা নগদ পেয়েছেন। এ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ক্লিনিকের নার্স ইসমোতারা। ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরে মহেশপুর উপজেলার নেপার মোড়ের পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে ঘটে।
পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী, চার মাসের গর্ভবতী অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়ার স্বামী আলামীন মারা যান। এরপর থেকেই সুমাইয়া চরম সংকটে পড়েন। পরিবারের সাপোর্ট না থাকায় বৃদ্ধা নানীর বাড়িতে থাকা অবস্থায় পেটের সন্তান বড় করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রসব বেদনা শুরু হলে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে সিজার দ্বারা ছেলে সন্তান জন্ম দেন। অভাবের তাড়নায় তিনি সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হন।
সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর কোনো বাড়িতে আমার ঠাঁই হয়নি। গর্ভবস্থায় ধার-দেনা করে চলেছি। ক্লিনিকের খরচ আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়নি। তাই নবজাতক সন্তানের দত্তক দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। দত্তক নেওয়া পরিবারকে চিনি না, শুনেছি তারা কুমিল্লার বাসিন্দা।’
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার জানান, কাগজপত্রে ত্রুটি এবং হাসপাতালের পরিবেশ অপ্রত্যাশিত হওয়ায় মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শিশুর বিক্রিতে সহযোগী নার্সকে আটক করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়েছে। মালিককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং অপরাধে সহযোগী নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’