ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের উন্নত প্রযুক্তি কিনল পাকিস্তান

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
প্রতীকী ছবি।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৮৬ মিলিয়ন ডলার বা ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও সহায়তা প্যাকেজ কিনেছে পাকিস্তান। গত ৮ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) মার্কিন কংগ্রেসকে এক চিঠিতে বিষয়টি জানিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএসসিএ পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের জন্য ৬ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও সাহায্যের অনুমোদন দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্যাকেজে লিংক-১৬ ব্যবস্থা, সাংকেতিক সরঞ্জাম, বিমান চালন বিদ্যার আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ, এবং সামগ্রিক লজিস্টিক সাহায্য অন্তর্ভুক্ত আছে।

চিঠিটিতে বিক্রির কারণ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। কারণ, এর মাধ্যমে পাকিস্তান চলমান সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টায় এবং ভবিষ্যতের যেকোনো জরুরি অপারেশনের জন্য মার্কিন ও সহযোগী বাহিনীর সঙ্গে আন্তঃপরিচালন ক্ষমতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে।’

প্রস্তাবিত এই বিক্রির লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে আধুনিক করে তোলা এবং সেগুলোর উড্ডয়ন সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা। চিঠিতে বলা হয়েছে, এটি ‘পাকিস্তানের ব্লক-৫২ এবং মিড লাইফ আপগ্রেড এফ-১৬ বহরকে আধুনিক ও সংস্কার করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বজায় রাখবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই আধুনিকীকরণ ‘যুদ্ধকালীন অপারেশন, মহড়া, এবং প্রশিক্ষণে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও মার্কিন বিমানবাহিনীর মধ্যে আরও নির্বিঘ্ন সমন্বয় ও আন্তঃপরিচালন ক্ষমতা দেবে। আর এই সংস্কারের ফলে বিমানগুলির আয়ু ২০৪০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে, এবং উড্ডয়ন সুরক্ষার গুরুতর উদ্বেগগুলিও দূর হবে।’

চিঠিতে পাকিস্তানের এই প্রযুক্তি গ্রহণের প্রস্তুতির ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশটি ‘তাদের সামরিক বাহিনীকে টিকিয়ে রাখার অঙ্গীকার দেখিয়েছে এবং এসব সামগ্রী ও পরিষেবা তাদের সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’ আঞ্চলিক উদ্বেগ নিরসন করে সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, ‘এই সরঞ্জাম ও সাহায্যের প্রস্তাবিত বিক্রি অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের কোনো পরিবর্তন করবে না।’

লকহিড মার্টিন কোম্পানি হবে এই বিক্রির প্রধান ঠিকাদার। মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, ‘এই প্রস্তাবিত বিক্রির বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানে অতিরিক্ত মার্কিন সরকারি বা ঠিকাদার প্রতিনিধি নিয়োগের প্রয়োজন হবে না’ এবং ‘এই বিক্রির ফলে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।’

এই ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের মধ্যে প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মূল্য ৩৭ লাখ ডলার এবং অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য ৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ৯২টি লিংক-১৬ ডেটা লিংক ব্যবস্থা এবং ছয়টি স্ট্যাটিক মার্ক-৮২ ৫০০ পাউন্ড সাধারণ উদ্দেশ্যের বোমার কাঠামো। তবে এই কাঠামোগুলোতে কোনো বিস্ফোরক থাকবে না, কেবল অস্ত্র সংহতিকরণ পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে।

লিংক-১৬ হলো একটি উন্নত কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ও নজরদারি ব্যবস্থা। এটি সুরক্ষিত, রিয়েল টাইম যোগাযোগ নেটওয়ার্ক যা সহযোগী বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত তথ্য আদান-প্রদান করে এবং মার্কিন ও সহযোগী ন্যাটো বাহিনী এটি ব্যবহার করে। শত্রুপক্ষের আকাশ ও ভূমির ইলেকট্রনিক জ্যামিং থেকেও এই ব্যবস্থা সুরক্ষিত।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘এটি যুদ্ধরত সেনাকে নজরদারি, শনাক্তকরণ, বিমান নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র ব্যবহারের সমন্বয় এবং সমস্ত পরিষেবা ও সহযোগী বাহিনীর দিকনির্দেশনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট-সংক্রান্ত কাজগুলি সরবরাহ করে।’

চুক্তির বাকি সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে এএন/এপিকিউ–১০সি সিম্পল কী লোডার্স এবং এএন/এপিকিউএক্স–১২৬ অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো ব্যবস্থা, যা শত্রু ও সহযোগী বিমান শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এতে অপারেশনাল ফ্লাইট প্রোগ্রাম ও বাধ্যতামূলক বিমান চালন বিদ্যার আধুনিকীকরণের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পরিবর্তন, সেই সঙ্গে কেওয়াই–৫৮ এম এবং কেআইভি–৭৮ ক্রিপ্টোগ্রাফিক অ্যাপ্লিক অন্তর্ভুক্ত। এগুলো ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি অনুমোদিত মডিউল যা সামরিক বিমান ও অন্যান্য কৌশলগত ব্যবস্থায় সুরক্ষিত যোগাযোগ ও শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়।

সরঞ্জামগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে—অতিরিক্ত সুরক্ষিত যোগাযোগ, নিখুঁত নেভিগেশন ও সাংকেতিক ডিভাইস, জয়েন্ট মিশন প্ল্যানিং সিস্টেমস ও সমর্থন, কমন অ্যামিউনিশনস বিল্ট-ইন-টেস্ট রিপ্রোগ্রামিং ইকুইপমেন্ট এবং এডিইউ–৯৮১ ক্ষেপণাস্ত্র অ্যাডাপ্টার ইউনিট।

এ ছাড়া, অন্যান্য অস্ত্র সংহতকরণ, পরীক্ষা ও সাপোর্ট সরঞ্জাম, খুচরা ও মেরামত যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার সরবরাহ ও সমর্থন, প্রকাশনা ও প্রযুক্তিগত ডকুমেন্টেশন, ফুল মোশন সিমুলেটর, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম এই প্যাকেজের আওতায় রয়েছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে পাকিস্তান মার্কিন সরকার ও ঠিকাদারের প্রকৌশল, প্রযুক্তিগত, এবং লজিস্টিক সহায়তা পরিষেবা, গবেষণা ও জরিপ, এবং লজিস্টিক ও প্রোগ্রাম সমর্থনের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট উপাদানও পাবে।

২০২১ সালে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে পাকিস্তান তাদের এফ-১৬ বহরের আধুনিকীকরণের জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু ওয়াশিংটন এর জবাব দিতে দেরি করে। ২০২৫-এর মে মাসের বিমান যুদ্ধে ভারতীর বহরের যথেষ্ট ক্ষতি ঘটিয়ে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সক্ষমতা প্রমাণিত হওয়ায় দেশটি এখন এফ-১৬-এর ওপর কম নির্ভরশীল। এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছে, কারণ এটি তাদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মেয়াদ ২০৪০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে।’