ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

জয়পুরহাটে মসজিদের পুকুর থেকে মাছ লুট

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
জয়পুরহাটের কালাইয়ে মসজিদের চ্যানরাল পুকুর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আঁওড়া গুচ্ছগ্রামে মসজিদের উন্নয়ন তহবিলের জন্য চাষ করা মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) ভোরে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল মসজিদ কমিটির পুকুর থেকে অন্তত ১০ মন মাছ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আঁওড়া গুচ্ছগ্রামের ‘চ্যানরাল’ নামের ওই পুকুরে তিন মাস আগে মসজিদ উন্নয়ন তহবিলের উদ্দেশ্যে মাছ চাষ শুরু করা হয়। প্রায় ৫০ হাজার টাকার রুই, মৃগেল, হাঙ্গরী, কাতলা ও সিলভার কার্প প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়েন গ্রামবাসী। নিয়মিত খাবার ও পরিচর্যার মাধ্যমে মাছগুলো বড় হচ্ছিল। কিন্তু বুধবার ভোরে হঠাৎই জাকারিয়া হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক পুকুরে জেলে নামিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে।

মসজিদের ইমাম ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরেই দেখি, খোরশেদ, জাকারিয়া, রিপন, মোজা, ইকবালসহ অনেকে আমাদের পুকুরে মাছ ধরছে। বাধা দিয়েও কিছুই করা যায়নি। জোরপূর্বক তারা অন্তত ৪০-৫০ হাজার টাকার মাছ তুলে নিয়ে যায়।’

স্থানীয় নারী শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সাইদুর রহমানসহ গুচ্ছগ্রামের মুসল্লিরা মসজিদের উন্নয়নের জন্য পুকুরে মাছ চাষ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিছু লোক পুকুর দখল করতে চায়। আজ তারা জেলে নামিয়ে সব মাছ ধরে নিয়ে গেছে।’

একই অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী সালমা বেগম, আমিছা বিবি, তাইরুল ইসলাম, ববি বেগমসহ আরও অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, ‘চ্যানরাল পুকুরটি’ মূলত একটি সরকারি (ভিপি) পুকুর। ২০২৪ সালে কালাই উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি সানোয়ার হোসেন ছানা এটি ইজারা নেন। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর তিনি পুকুরটি আঁওড়া গুচ্ছগ্রাম জামে মসজিদ কমিটিকে দান করেন। এরপর থেকে মসজিদ কমিটি পুকুরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছ চাষ করে আসছিল।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুরটির ডিসিআরসহ সব বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। এটি মসজিদের পবিত্র সম্পদ। গ্রামের মানুষ মিলে আমরা চাষ করছিলাম। অথচ বুধবার সকালে জাকারিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক ১০-১৫ মন মাছ জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অভিযুক্ত জাকারিয়া হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেকার রহমান বলেন, ‘ওই পুকুরটি একটি ভিপি পুকুর, যা ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ সাল পর্যন্ত সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়া আছে। আইন অনুযায়ী তিনি এটি অন্য কাউকে হস্তান্তর করতে পারেন না। তবে পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’

এ ঘটনায় পুরো গুচ্ছগ্রামজুড়ে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও ক্ষোভ। গুচ্ছগ্রামবাসীর দাবি—ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্তকারী এবং মসজিদের সম্পদ লুটকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।