কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষে সফল হচ্ছেন কৃষক। আদা একটি মসলাজাতীয় ফসল। দিন দিন বস্তা আদা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। কৃষকগণ তাদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। তরকারি ও রোগ নিরাময়ে আদার ব্যবহার আদিকাল থেকে চলে আসছে। আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, আদা হজমকারী এনজাইম উৎপাদন বাড়িয়ে খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে এবং বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। আদায় রয়েছে ঔষধিগুণ, ঠান্ডা ও কাশি উপশমে আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কফ-কাশি দূর হয়। আদা অতিরিক্ত ওজন কমাতে আদা সাহায্য করে। নিয়মিত আদা খেলে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
চলতি বছর কটিয়াদী উপজেলার পৌরসভাসহ এবং বনগ্রাম, সহশ্রামধূলদিয়া, করগাঁও, চাঁন্দপুর, মুমুরদিয়া, আচমিতা, মসূয়া, লোহাজুরী ও জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসার ছাদে, বাড়ির আঙিনায়, খোলা পরিত্যক্ত ও পতিত জায়গায় ১৭ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এ উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের বস্তা, বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষ হওয়া আদা থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কেজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা।
কটিয়াদী পৌরসভার বোয়ালিয়া মহল্লার কৃষক মো. চুন্নু মিয়া জানান, গত বছর তিনি অল্পকিছু বস্তায় আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে ছিলেন। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছর ১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি। কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি পরিদর্শন করেছেন।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বস্তায় আদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার বস্তায়; কিন্তু চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ বস্তা। বস্তায় আদা রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। আদা রোপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে সিমেন্ট বা অন্য বস্তায় মাটি প্রস্তুত করে নিতে হয়। এ জন্য উর্বর মাটি, জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োজন। প্রতি বস্তার জন্য ১২-১৫ কেজি মাটি, ৫-৬ কেজি পচা গোবর, ১ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট, ১ কেজি ছাই, ২৫ গ্রাম ডিএপি সার, ১০ গ্রাম পটাশ সার, ৫ গ্রাম বোরন সার, ৫ গ্রাম জিংক সার এবং ১০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তায় ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম আদার বীজ কন্দ রোপন করতে হবে।
আদার ভালো ফলন পেতে আদা রোপণের ৫০ দিন, ৮০ দিন ও ১১০ দিন বয়সে প্রতি বস্তায় ২-৩ গ্রাম পটাশ ও ৩-৫ গ্রাম ইউরিয়া সার একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পোকা দমনের জন্য ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকনাশকের জন্য মাঝেমধ্যে কার্বেনডাজিম ও প্রোপিকোনাজল গ্রুপের স্প্রে করতে হবে। সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা উঠাতে হয়। জাত ভেদে প্রতি বস্তায় ৮০০ গ্রাম থেকে ১.০ কেজি ২০০ গ্রাম পর্যন্ত বা অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের পৌরসভা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম জানান, ‘কৃষকরা দিন দিন বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকেছেন। এতে কৃষকগণ অনেক লাভবান হচ্ছেন। পৌরসভা ব্লকের বোয়ালিয়া এলাকার মো. চুন্নু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এবার ৪ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা
চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছি।’
চান্দপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, চান্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। তা ছাড়াও উদ্বৃদ্ধকরণের মাধ্যমে আরও ৪৫০টি বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। আগামী বছর বস্তায় আদা চাষ আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন বাসার ছাদ এবং নিম্ন এলাকায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণ করা হবে। এতে করে কৃষকগণ তাদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জালালপুর ইউনিয়নের ঝাকালিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, এই ব্লকে আগে কখনও বস্তায় আদা চাষ করা হয়নি। এইবারই প্রথম ঝাকালিয়া ব্লকে ৫০০ বস্তায় আধা চাষ করেছেন স্থায় কৃষকরা। কৃষকদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে কৃষকরা লাভবান হবেন।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, আদা মসলা হিসেবে খাওয়া ছাড়া ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দিকাশি,আর্থারাইটিস, মাইগ্রেন, ডায়েরিয়া, গ্যাস, কনস্টিপেশন, হার্টের সমস্যা, ডায়বেটিস, হাই-কোলেস্টেরলের মতো বিবিধ রোগ প্রতিরোধে আদার জুড়ি নেই। কটিয়াদী উপজেলায় এবার বাসার ছাদ এবং বাড়ির আঙিনায়, পরিত্যক্ত ও পতিত জায়গায় ১৭ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে।
এতে প্রায় ১৭০০ হাজার ৫০০ কেজি আদা উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা প্রায়। বস্তায় আদা চাষ করতে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের বস্তা, বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।


