ইরানে ৬৭ বছর বয়সি রাজনৈতিক বন্দি জাহরা শাহবাজ তাবারিকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, কর্তৃপক্ষ শাহবাজ তাবারির বিরুদ্ধে নির্বাসিত বিরোধী দল মুজাহিদিন-ই খালক অর্গানাইজেশনের (এমইকে) সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগ এনেছে। যদিও তার পরিবার এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে রাশত শহরের বিপ্লবী আদালতের প্রথম শাখার বিচারক আহমেদ দারভিশ মাত্র কয়েক মিনিটের একটি ভিডিও শুনানির পর রায়টি ঘোষণা করেন। এইচআরএএনএ বলছে, পুরো বিচার প্রক্রিয়া ১০ মিনিটও স্থায়ী হয়নি এবং স্বাধীন আইনি সহায়তার সুযোগ না দিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শাহবাজ তাবারির ছেলে সংস্থাটিকে জানান, আদালত কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবী তার মায়ের পক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন করেননি, বরং আদালতের রায়কে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরো বিচারটি ছিল নিছক প্রদর্শনী’।
পরিবারের দাবি, শাহবাজ তাবারির কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তার ছেলে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া’।
গত ১৭ এপ্রিল রাশতের নিজ বাসা থেকে শাহবাজ তাবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী তখন তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জিনিসপত্র জব্দ করে। পরে তাকে লাকান কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তথাকথিত প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয় একটি কাপড়ের টুকরো, যাতে লেখা ছিল ‘নারী, প্রতিরোধ, স্বাধীনতা’ এবং একটি অপ্রকাশিত ভয়েস মেসেজ। পরিবারের দাবি, এগুলোর কোনোটি থেকেই সশস্ত্র বা সংগঠিত কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার সময় বিচারক হাসছিলেন, যা তারা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তাদের সাত দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
শাহবাজ তাবারি একজন বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং ইরানের প্রকৌশল সমিতির সদস্য। তিনি সুইডেনের বোরাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেকসই শক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এইচআরএএনএ জানিয়েছে, অতীতে অনলাইন কার্যক্রমের কারণে তাকে একবার আটক করা হয়েছিল এবং পরে ইলেকট্রনিক গোড়ালি ট্যাগসহ মুক্তি দেওয়া হয়।
ইরানে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইরান হিউম্যান রাইটস সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর একদিনেই ২৮ জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার ফলে অক্টোবর মাসে মোট মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮০।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ইরানে ১,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যাদের অনেকেই ভিন্নমত প্রকাশ বা রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে অন্যায্য বিচারের শিকার হয়েছেন। সংস্থাটি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিদিন গড়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাকে ‘একটি মর্মান্তিক বাস্তবতা’ বলে উল্লেখ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, শাহবাজ তাবারির মামলাটি ইরানে ভিন্নমত দমনের সর্বশেষ উদাহরণ, যেখানে বিচারিক প্রক্রিয়ার নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল

-20251027054927.webp)

