ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

অরুণাচলের কাছে ৩৬টি বিমান আশ্রয়কেন্দ্র করেছে চীন, চিন্তায় ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

তিব্বতের লুনজে বিমানঘাঁটিতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র (এইচএএস), নতুন প্রশাসনিক ভবন এবং একটি নতুন অ্যাপ্রোনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে চীন। বেইজিংয়ের এই ঘাঁটি ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত বরাবর অবস্থিত।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অরুণাচল প্রদেশের কৌশলগত শহর তাওয়াং থেকে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দূরের লুনজেতে এই নতুন শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ চীনকে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েনের সুবিধা দেবে। এতে ভারতের বিমানবাহিনীকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়ও কমে যাবে চীনের। কারণ ভারতের নিজস্ব ঘাঁটিগুলো অরুণাচল ও আসামে অবস্থিত।

ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া এনডিটিভিকে বলেছেন, লুনজেতে ৩৬টি শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ হলো পরবর্তী সংঘাতের সময় তাদের কৌশলগত সব যুদ্ধবিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ওই ঘাঁটিতেই অবস্থান করবে।

তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন সুড়ঙ্গে অস্ত্র ও জ্বালানি আগেভাগেই মজুত করেছে চীন। ধানোয়া বলেন, ডোকলাম সংঘাতের সময় (২০১৭ সালে) আমি বলেছিলাম, তিব্বতে চীনা বিমানবাহিনীর সমস্যা বিমান নয়, বরং বিমানের মোতায়েন। আমি তখনই বলেছিলাম, যেদিন তারা তিব্বতের ঘাঁটিগুলোতে শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করবে, সেদিনই বুঝতে হবে তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে তাদের তিব্বত অঞ্চলের প্রধান দুর্বলতা দূর হবে।

ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোঁসলা বলেন, এসব বিমানঘাঁটির নির্মাণ ও উন্নয়ন ভবিষ্যতে চীনের যুদ্ধ পরিকল্পনাকে সহায়তা করতে পারে। এটি ভারতের জন্য ‌‌‘‘গুরুতর কৌশলগত হুমকি’’ হিসেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে।

তিনি বলেন, লুনজের এই ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। ৩৬টি শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে অস্ত্রভাণ্ডার মজুত রাখার সুযোগ তৈরি, হামলার ঝুঁকি হ্রাস এবং উঁচু অঞ্চলে ধারাবাহিক অভিযান চালানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

খোঁসলা বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্ভুল অস্ত্র, ভারতীয় বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবে; ফলে সংঘাতের শুরুতেই ঘাঁটিটি অচল করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, তিংরি, লুনজে ও বুরাংয়ের মতো বিমানঘাঁটিগুলো নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) খুব কাছাকাছি; প্রায় ৫০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই নৈকট্যের কারণে সীমান্ত উত্তেজনা দেখা দিলে দ্রুত বিমান মোতায়েন করা সম্ভব; যা অরুণাচল, সিকিম, উত্তরাখণ্ড ও লাদাখে ভারতের অবস্থানের ওপর নজরদারি চালানো সহজ হবে। 

ভ্যান্টরের স্যাটেলাইট চিত্রে (পূর্বের ম্যাক্সার) দেখা যায়, লুনজে ঘাঁটির রানওয়েতে কয়েকটি সিএইচ-৪ ড্রোনও অবস্থান করছে। সিএইচ-৪ মনুষ্যবিহীন ড্রোন উঁচু অঞ্চলে মিশন পরিচালনার জন্য নকশা করা হয়েছে। এটি ১৬ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতা থেকে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে; যা তিব্বতের মতো পার্বত্য এলাকায় আক্রমণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কার্যকর। ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সরযুক্ত এসব ড্রোন স্থলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের সঙ্গে ডেটা সংযোগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।