বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান (সিজেসিসি) জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা। শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সাক্ষাৎকালে দুই নেতা ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করেন। বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
এ সময় জেনারেল মির্জাকে “দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ: গ্রাফিতি অব বাংলাদেশ’স নিউ ডন” শিরোনামের বইটি উপহার দেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদে বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে চরম আতঙ্কে পড়েছে ভারত। কূটনৈতিক মহলে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। দেশটির সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকে সংবাদমাধ্য—সর্বত্র এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
বইটির প্রচ্ছদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো অর্থাৎ আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ কয়েকটি অঞ্চল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব অঞ্চল মূলত ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’-এর অংশ ছিল, যা ‘সুলতানাত-ই-বাংলা’ নামেও পরিচিত। বইটিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহকে ‘বাংলাদেশের নতুন ভোর’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শাহি বাংলা বা সুলতানি বাংলা, ১৩৫২ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন মুসলিমশাসিত রাষ্ট্র। অর্থাৎ ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যের বিশাল অংশ এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত ‘বৃহত্তর বাংলাদেশের’ (সালতানাত-ই-বাংলা) একটি মানচিত্র নিয়ে ঘুম হারাম হয়েছে নয়াদিল্লির।
মানচিত্রটি প্রথম প্রকাশের পরও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় তোলে ভারতীয়রা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে দেশটির শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিনিধির হাতে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ তুলে দেওয়ায় বেজায় চটেছেন। ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করছেন, ড. ইউনূসের এই আচরণ ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ ধারণার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, যা অতীতে কিছু ‘উগ্র ইসলামপন্থি’ গোষ্ঠী উত্থাপন করেছিল।
অন্য এক রেডিট ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই দশকে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিলই অবাক করার মতো। এখন ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।’ একজন ভারতীয় এক্স ব্যবহারকারী প্রশ্ন তোলেন, ‘পাকিস্তানের এক সেনা জেনারেল কেন বাংলাদেশের একজন বেসামরিক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক বিষয়ে বৈঠক করছেন? এর ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি নজরে রাখছেন তারা। পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’-এর মতো সংবেদনশীল বিষয়ের সঙ্গে কোনো সরকারি পদধারীর নাম যুক্ত হওয়া স্বাভাবিকভাবেই কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুনভাবে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। একই সময়ে ভারতের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হয়ে ওঠে। ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে আছে বলে বারবার অভিযোগ করে আসছে ভারত।
এটাই প্রথম নয়, এর আগে চীন সফরের সময় ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘স্থলবেষ্টিত অঞ্চল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘এই অঞ্চলের সমুদ্রপথের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ’। ওই বক্তব্যে নয়াদিল্লিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।
সূত্র: নিউজ উইক, ইন্ডিয়া টুডে



