ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

শ্রেণিকক্ষকে শয়নকক্ষ বানিয়ে উপাধ্যক্ষের বসবাস

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩১০১ নম্বরের কক্ষটিতে শয়নকক্ষে পরিণত করা হয়েছে। ছবি- সংগৃহীত

শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র সরিয়ে, নিজের বসবাসের জন্য আসবাবপত্র স্থাপন করে ক্লাসরুমকে শয়নকক্ষে পরিণত করেছেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩১০১ নম্বরের কক্ষটিতে বসবাসের জন্য বিছানা, এসি, ফ্রিজ, টিভি, আলনা, চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, জুতা রাখার টাকসহ ইত্যাদি যাবতীয় আসবাবপত্র রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের সকল আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলে রঙ করে বেডরুম হিসেবে বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটিতে কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, ‘স্যার, এখানে ২ বছরের বেশি সময় থেকে থাকছেন। বাড়ি ভাড়া পাইলেও ভাড়া বাড়িতে থাকে না। আজ কয়েকদিন হলো ছুটিতে বাড়িতে গেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটিতে কর্মরত এক শিক্ষক বলেন, ‘তিনি দুর্নীতে লিপ্ত, কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা এদিক-সেদিক করেন। এর আগে যে কলেজে ছিলেন সেখানে দুদকের মামলা আছে।’

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী এর আগে ফরিদপুরের রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ২৯ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের (দুদক) সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাসার ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট (বুধবার) রাজবাড়ী বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি করেন। আতাউল হকের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আতাউল হক ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির পরে তাকে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে বদলি করা হয়।

বদলি হয়ে এসে প্রথম দিকে তিনি সরকারি কলেজের ডরমেটরিতে থাকলেও সর্বশেষ গত ২ বছর থেকে তিনি কলেজের ৩১০১ নং ক্লাস রুমটি দখল করে বসবাস করছেন। এ ছাড়াও তিনি বাড়ি ভাড়া না নিলেও সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়মিত বাড়ি ভাড়া বাবদ তার মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ পাচ্ছেন।

আতাউল হক খান চৌধুরী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চৌধুরী বাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। বর্তমানে কয়েকদিনের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন।

ক্লাসরুম দখল করে নিজের বসবাসের জন্য বেডরুম বানানোর বিষয়ে উপাধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী  বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমি ঠিক করি নাই। আমি আর সেখানে থাকবো না।’

আপনি সরকারি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর কেন থাকলেন ক্লাস রুমে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে অধ্যক্ষ স্যার থাকতে বলেছেন। একা মানুষ দূরে কোথাও না থেকে কলেজে থাকতে বলছেন। আর এর আগেও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকসহ অনেক শিক্ষক ছিলেন এখানে।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো.নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনো অনুমোদন দেয়নি। বিষয়টা আপনার কাছে অবগত হলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’