ঢাকা বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ছাত্রকে হত্যার অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষক কারাগারে

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে আল-মঈন ইসলামী একাডেমীতে হেফজ বিভাগের ছাত্র সানিম হোসাইনকে (৮) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এতে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, অধ্যক্ষ বশির আহমেদ ও ফয়সাল নামে তিন জনকে আসামি করা হয়। 

ঘটনার পরে আটক মাহমুদকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (১৪ মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদ্রাসা থেকে নিহত সানিমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এর আগে দুপুরে সানিমের ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু হয়। 

সানিম রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের ব্যবসায়ী হুমায়ন কবির মাতব্বরের ছেলে ও মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। সে ২০ পারা কোরআনে হাফেজ ছিল।

ঘটনার রাতেই সানিমের বাবা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে সদর থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫ জনের নামে মামলা করেন। 

পরিবারের অভিযোগ, ৩-৪ দিন আগে পরিবারকে জানানো হয়, সানিম হুজুরের কথা শোনে না, এমনকি হুজুরের নামে বদনাম করে। এ নিয়ে হুজুর তার ওপর রেগে ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে পরিবারকে খবর দেওয়া হয়, সানিম টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়েছে।

মাদ্রাসায় এসে সেই হুজুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই সবাই বলেছেন, তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সানিমের মরদেহ স্বজনরা এসে টয়লেটে পাননি। তার লাশ মাদ্রাসার নিচতলার একটি কক্ষের বিছানায় পাওয়া গেছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। 

শিক্ষকদের দাবি, সানিম মাদ্রাসা ভবনের তিনতলায় টয়লেটে ঢুকে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে শিক্ষকরা তার মরদেহ সেখান থেকে নিচতলায় নামিয়ে একটি কক্ষের বিছানায় রাখেন। 

তবে এ ঘটনায় মাদ্রাসাকক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গামছা নিয়ে সানিমকে টয়লেটে ঢুকতে দেখা গেলেও বের হওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। সানিমের মরদেহ ৩য় তলার টয়লেট থেকে শিক্ষকরা নিচতলায় নামিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে নামানোর ভিডিও দেখাতে পারেননি তারা। 

সানিমের বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের বিচার চাই।’

ঘটনার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বশির আহমেদ বলেন, ‘ক্লাস শেষে সবাইকে নামাজ আর খাওয়ার বিরতি দেওয়া হয়। নামাজ পড়ে সবাই খাইতে যায়। কিন্তু সানিম যায়নি। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় সে গামছা নিয়ে টয়লেটের প্রবেশ করে। সেখান থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘সানিমকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা মামলা করেছেন। ঘটনার পর আটক শিক্ষক মাহমুদকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’