ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

কেন স্থানীয়রা কুমিল্লার সেই নারীকেই মারধর করে?

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
ভুক্তভোগী নারী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সেই গৃহবধূ সাহায্যের জন্য চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু তারা প্রকৃত ঘটনা না জেনে উল্টো নারীকেই মারধর করে বলে জানান ভুক্তভোগী।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী জানান, ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, ধর্ষণের পর ওই নারী চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু তারা প্রকৃত ঘটনা না জেনে উল্টো নারীকেই দোষারোপ করে মারধর শুরু করে এবং সেই অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। পরে তারা বুঝতে পারে, ওই নারী আসলে ধর্ষণের শিকার। তখন স্থানীয়রা ফজর আলীকে আটক করে মারধর করে এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফজর আলী হাসপাতাল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে (৩৮) ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজন—মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মারধর করা ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনায় ভিডিও ভাইরাল করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে এখন ভুক্তভোগী ওই নারী রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তিনি মামলা আর চালিয়ে নিতে চান না। মামলা তুলে নিতে চান।

মামলা তুলে নিতে কেউ তাকে চাপ প্রয়োগ করেনি এমনকি টাকার লোভও দেখায়নি বলে জানান ওই নারী। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কারণে ও সামাজিক চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।’

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তার স্বামী দুবাই প্রবাসী। তিনি তাকে বলেছেন, সম্মান তো চলেই গেছে এখন মামলা করলে কি সেই সম্মান ফিরে আসবে? আসবে না।

ওই নারী বলেন, ‘মামলা করছিলাম ভালার লাইগা। অহন জামাইয়ে না করে। মামলাটা যখন করছি জামাই আমার লগে রাগারাগি কইরা কথা বলে নাই। গেরামের লগেও বুঝতে পারি নাই। স্বামী এইসব শুইনা, দেইখা অহন ফোনই দেয় না।’

এদিকে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল আসামি ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এমন দাবি করেছে স্থানীয়রা। তারা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ফজর আলীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। এই সুবাদে টাকার লেনদেনও করতেন ওই নারী।

তবে এমন দাবি অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, ফজর আলীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক ছিল না, তবে তার সঙ্গে তিনি টাকা লেনদেন করতেন। টাকা-পয়সা নিয়েই কথা বলতেন। টাকা নিয়েই ছিল সম্পর্ক।’