ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

সিরিয়ার পরিবর্তে ইরানে আশুরা পালন করবেন ইরাকিরা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
ইরানের মসজিদের ফাইল ছবি।

সিরিয়ায় এ বছর আশুরা উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্থগিত করায় ইরানের দিকে ছুটছে ইরাকি তীর্থযাত্রীরা। মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরায় হাজার হাজার তীর্থযাত্রী পবিত্র সাইয়্যেদা জয়নাব (রা.) -এর মাজারে সমবেত হন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এ বছর অনুষ্ঠান স্থগিতের খবর পাওয়া গেলেও আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি সিরিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সিরিয়ার দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত পবিত্র সাইয়্যেদা জয়নাব (রা.)-এর মাজারে এ বছর আশুরা উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ইরাকি তীর্থযাত্রীরা তাদের মহররম সফরের রুট পরিবর্তন করে ইরানের ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।

দামেস্কের দক্ষিণে অবস্থিত সাইয়্যেদা জয়নাবের মাজারটি শিয়া মুসলমানদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। অনেকের বিশ্বাস, এখানে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতনি জয়নাবের (রা.) কবর রয়েছে। প্রতি বছর বিশেষ করে মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরায় হাজার হাজার তীর্থযাত্রী সেখানে সমবেত হন।

মাজারে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইরাকি তীর্থযাত্রীরা। আল-দিওয়ানিয়া প্রদেশের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সি উম হাসান শাফাক নিউজকে বলেন, আমি প্রতি বছর এই সফরে যাই, সেখানে অন্য নারীদের সঙ্গে মিলেমিশে আশুরার স্মরণে অংশ নিই। এবার যখন জানলাম কোনো আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে না, তখন খুব মন খারাপ হয়ে গেল।

তিনি আরও জানান, সাধারণত তিনি এই সফরের জন্য ৫ লাখ ইরাকি দিনার (প্রায় ৩৮০ ডলার) সঞ্চয় করেন। এবার সিরিয়া সফরের পরিবর্তে তিনি ইরানের কোম শহরের ফাতিমা মাসুমার (রা.) মাজারে গিয়েছেন। খরচও ছিল প্রায় সমান।

এদিকে সিরিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, তারা কোনো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেনি বা মাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়নি। তবে মাজার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও সংগঠনগত কারণে এবারের অনুষ্ঠানগুলো মাজার প্রাঙ্গণের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মাজার খোলা আছে এবং আনুষ্ঠানিকতা নিষিদ্ধ নয়—এটাই সরকারি বক্তব্য। কিন্তু ভেতরে অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত আলাদাভাবে নেওয়া হয়েছে, যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।’
সিরিয়ার অস্থিতিশীলতার কারণে ইরানকে বাছাই করে নিচ্ছেন ইরাকি তীর্থসংগঠক ও তীর্থযাত্রীরা।

এদিকে শাফাক নিউজ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পায়নি।

সম্প্রতি সিরিয়ার পরিস্থিতি তুলনামূলক স্থিতিশীল হওয়ায় আবারও সেখানে ধর্মীয় সফর শুরু হয়েছিল। ইরাকি পর্যটন সংস্থাগুলো ইরানের মতো সিরিয়াতেও মাজার সফরের প্যাকেজ চালু করেছিল।

তবে এ বছর রাজনৈতিক উত্তেজনাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ইরাকের অন্যতম প্রভাবশালী শিয়া রাজনৈতিক ধারার নেতা মুকতাদা আল-সাদরের ঘনিষ্ঠ ইসাম হুসেইন সিরিয়া সফর পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সিরিয়ার সরকার সন্ত্রাসী আইন প্রয়োগ করছে, যা ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থি।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ধর্মীয় আবেগ, নিরাপত্তা এবং রাজনীতির এক জটিল সমীকরণে এবার আশুরা উপলক্ষে সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী তীর্থযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ইরান-ইরাক ধর্মীয় সম্পর্ক আবারও গুরুত্ব পাচ্ছে।