ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

নির্যাতনের করুণ বর্ণনা দিলেন কুমিল্লার সেই নারী

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ১০:০৪ এএম
ভুক্তভোগী নারী। ছবি-সংগৃহীত

সময়মতো ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার সেই ভুক্তভোগী নারী।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ছোট বোনের বিয়ে উপলক্ষে চার হাজার টাকা সুদে এক মাসের জন্য ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিই। কয়েকদিন আগে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিতে পারিনি। ফজরের কাছে আরও কয়েকদিন সময় চাই, কিন্তু তা না দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। 

তিনি  বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে সেই টাকার সূত্র ধরে বাড়িতে এসে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ধর্ষণ করে ফজর। ধর্ষণের বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে ফজরকে পেটাতে থাকে। এ সময় আমাকেও বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেছিল তারা। বারবার অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। ওসব লোকজনই নির্যাতনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।’ 

ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবার উদ্বেগ আর আতঙ্কে রয়েছে। নির্যাতিত নারীর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার প্রবাসী স্বামী কোনো ঝামেলা চান না। তিনি মামলা তুলে নিতে বলছেন। তবে অন্য কেউ তাকে মামলা তুলে নিতে বলেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি খুব ক্লান্ত। আর পারছি না। এমন যেন আর কারো সাথে না ঘটে। এত মানুষ বাড়িতে আসে। তাদের নানা প্রশ্ন। কীভাবে তাদের বোঝাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। এত মানুষ বাড়িতে আসুক, আমরা চাই না। আমার সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও এই হয়রানি বন্ধ করুন। আর নিতে পারছি না আমরা।’

ভুক্তভোগীর ছোট ভাই বলেন, ‘ঘটনার দিন মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন না। তারা সাপ্তাহিক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। আমি নিজে পাশের উপজেলা তিতাসে ছিলাম। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। বাড়িতে বোন, বোনের ছোট দুই ছেলেমেয়ে ছিল। তারা ঘুমিয়ে ছিল। এরই মধ্যে ঘটে যায় এমন ঘটনা।

তিনি বলেন, বাড়িতে এসে শুনেছি, ফজর আলীর ভাই শাহ পরানের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরে শাহ পরানই ঘটনার সময় আমাদের বাড়িতে লোকজন পাঠায়। তারাই মারধর করে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। এখন নানা জনে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে (৩৮) ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজন—মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মারধর করা ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।