ঢাকা শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

শিম চাষে স্বপ্ন বুনছেন কালীগঞ্জের চাষিরা

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০৪:১০ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহটের কালীগঞ্জ উপজেলায় উঁচু ভূমিতে কৃষকরা অন্যান্য সবজির পাশাপাশি চাষ করেছেন শিম। থোকা থোকা রঙিন ফুঁলে সেজেছে শিমের ক্ষেত। আর শীতের মৃদু বাতাসে শিম ফুলের সঙ্গে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।

রবিবার  (২২ ডিসেম্বর) কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় মাঠে মাঠে শিম ফুলের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমের। থোকা থোকা শিমে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। অল্প জমি আর স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষে অনেক চাষির ভাগ্য বদল হয়েছে।

চাষিরা জানায়, আষাঢ় মাসের শেষদিকে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এরপর কিছুদিন সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে চারাগুলো বড় হয়। এরপর মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই/তিন মাসের মধ্যেই বিক্রি করার মতো হয়ে যায় শিম। স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।

শুধু সবজি হিসেবে নয়, বীজ হিসেবেও শিম চাষাবাদ করেন লালমনিরহাটের চাষিরা। বীজ হিসেবেও বাজারে বেশ কদর শিমের। বীজ করতে বিভিন্ন সিড কোম্পানি চাষিদের আগাম নির্বাচন করে তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরে উৎপাদিত বীজ সেই সিড কোম্পানি ন্যায্য মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে সংরক্ষণ করেন পরে বাজারজাত করেন। তবে বীজের জন্য করা ক্ষেতের শিম সবজির জন্য বিক্রি করা হয় না। এটিতে একটু যত্ন ও খরচ বেশি বলে দামও বেশি পান চাষিরা।

কালীগঞ্জ উপজেলার সবজি এলাকা খ্যাত চলবলা ইউনিয়ন দুহুলী গ্রামের চাষি আবুল বাসার। তার নিজের তেমন জমি নেই। তবে কৃষিতে বেশ দক্ষ এই চাষি। তাই এক- তৃতীয়াংশ ফসল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে প্রতি বছর শিমসহ নানান জাতের সবজি চাষাবাদ করেন। শিমে কম খরচে অধিক লাভ তাই এ বছরও ২৫ শতাংশ জমিতে শিম চাষাবাদ করেছেন তিনি। এতে তার খরচ পড়েছে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে ৬ থেকে ৮ মণ শিম উঠছে। এটি চলবে আরও দুই মাস। তবে দিন যত যাবে উৎপাদন তত বাড়লেও কমে যাবে দাম। বর্তমান বাজারে শিমের চাহিদা ভালো থাকায় দামও ভাল পাচ্ছেন তিনি। ক্ষেতেই প্রতি কেজি ৩৫ /৪০টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করছেন তিনি।

চাষি বাদল মিয়া বলেন, অল্প জমিতে স্বল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন করতে শিম চাষের বিকল্প নেই। মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রতি সপ্তাহে ৭মণ শিম বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ উঠেছে। এখন শুধু মাঝে মধ্যে স্প্রে করতে হবে আর শিম উঠায়ে বাজারে বিক্রি করা। রোগবালাই না হলে এমন করে আরও প্রায় দেড়/দুই মাস শিম আসবে। গত বছর এ জমি থেকে ৫০ হাজাত টাকা আয় হয়েছে। এ বছর দাম ভালো থাকায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।

চলবলা  গ্রামের চাষি আসাদুল্লাহ বলেন, সম্বল বলতে মাত্র ২০ শতাংশ জমি। যেখানে অন্য ফসলের সঙ্গে শীত মৌসুমে কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করছেন তিনি। গত বছরও ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন শিম বিক্রি করে। শীতকালে শিমের বেশ চাহিদা থাকে তাই বাজারে এর দামও থাকে বেশি। বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই। পাইকাররা ক্ষেত থেকে শিম কিনে নেয় ন্যায্য মূল্যে। অল্প জমিতে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষের বিকল্প নেই বলেও দাবি তার।

কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা এলাকার চাষি সামাদ মিয়া  জানান, উঁচু জমিতে ধান চাষ করে তেমন মুনাফা না আসায় চাষাবাদ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। হঠাৎ এক আত্মীয়ের পরামর্শে ২ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে বেশ লাভবান হন তিনি। সেই থেকে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। উৎপাদন খরচ উঠে গিয়ে লাভের অংশে পড়েছেন তিনি। আবহাওয়া আর বাজার অনুকূলে থাকলে এক লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন এই চাষি।

শিম চাষ করে সেই টাকায় সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর পরেও প্রতি বছর জমি বন্দক নিচ্ছেন তিনি। অভাব নামক দানবকে বিদায় দিয়েছেন। তার অনুকরণে ওই গ্রামের অনেক চাষি এখন বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ শুরু করেছেন।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সাথে কথা বলেছি তারা আমাদের পরামর্শে শীতকালীন শিমের আবাদ করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  লতুষার কান্তি রায় জানায়, শিম প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।