ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

দারিদ্রতা জয় করে জিপিএ-৫, কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় ঐশি

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৬:৪১ এএম
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত ঐশি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চরম দারিদ্রতার মাঝেও হাল ছাড়েনি আফিয়া ইবনাদ ঐশি। প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত সে। সংগ্রাম আর অধ্যবসায়ের গল্প লিখে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে এই অদম্য মেধাবী। কিন্তু সাফল্যের এই মুহূর্তেও ঐশির চোখে ভেসে বেড়ায় অনিশ্চয়তার ছায়া। কারণ কলেজে ভর্তি হওয়া, বই কেনা, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সবই এখন পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। বাবা-মা দু’জনেই চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নেই সচ্ছলতা, নেই স্বপ্নপূরণের নিশ্চয়তা। অথচ ঐশির একটাই স্বপ্ন মানুষের সেবা করার জন্য একজন ডাক্তার হওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্নটাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে দারিদ্রতার অন্ধকারে।

ঐশি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের জহির মোড় এলাকার আলতাব হোসেন ও নাজমা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। তার বাবা আলতাব হোসেন একজন বর্গা চাষী। জমি-জায়গা বলতে বাড়ি-ভিটা ছাড়া কিছু নেই। মা নাজমা বেগম মেয়ের পড়াশোনার জন্য টিউশনি করে আয় করেন এবং সেই টাকা দিয়ে মেয়ের শিক্ষার খরচ যোগান।

পরিবারে দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, আর ছোট মেয়ে ঐশি এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অভাব-অনটনে কষ্টে দিন কাটছে তাদের সংসারে। দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া নিয়ে পরিবার গভীর দুশ্চিন্তায় আছে।

সহর উদ্দিন সরকার সরকারি মডেল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া ইবনাত ঐশি। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত সে। প্রতিকূলতার মাঝেও হার না মানা মনোভাব আর কঠোর পরিশ্রমের ফলে পেয়েছে এসএসসিতে জিপিএ-৫। তার স্বপ্ন একদিন সে একজন চিকিৎসক হবে, মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে এখন দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক বাঁধা। কলেজে ভর্তি, বই-খাতা, কোচিং ফি সবকিছুই দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারটির জন্য বিশাল বোঝা। এমন অবস্থায় হতাশা আর দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে ঐশির পরিবার।

ঐশির মা-বাবার একটাই আশা সরকারি বা বেসরকারি কেউ পাশে দাঁড়ালে মেয়েটি স্বপ্নপূরণ করতে পারে। তারা চান না দারিদ্র্যের কাছে হার মানুক মেয়ের ভবিষ্যৎ। তাদের বিশ্বাস, আপনাদের সামান্য সহযোগিতাতেই ঐশি হয়ে উঠতে পারে আগামীর আলোকিত ভবিষ্যৎ।

ঐশি বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। এখন আমার স্বপ্ন, আমি ডাক্তার হব। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় আছি। কেউ পাশে দাঁড়ালে আমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।

সহর উদ্দিন সরকার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তাহের বলেন, ঐশি অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। অনেক পরিশ্রম করে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সবসময় আছে। ঐশির পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।