তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। বসতঘরে পানি ওঠায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও রাস্তার ওপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) মধ্যরাতে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
বুধবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করে। বিকাল ৩টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অবস্থা স্থির থাকলেও রাতে আবারও পানি বাড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আকস্মিক এই বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা এবং সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডাসহ ১৫টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অনেকের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা গবাদিপশু নিয়ে বাঁধ কিংবা রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন। কোথাও রাস্তার পাশেই চুলা বসিয়ে রান্না হচ্ছে, আবার কেউ কাঠের খুঁটি ও পলিথিনে তৈরি একচালা ঘরে গরু ও ছাগল নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি উঠেছে। ফলে লালমনিরহাট সদরের ৬টি ও আদিতমারী উপজেলার ৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটন দাস বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, সেগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পানি না কমা পর্যন্ত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যাকবলিতদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।