ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

আইসিইউতে থেকেও তারা হত্যা মামলার আসামি

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্র আইসিইউতে। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর যন্ত্রণা। অন্যদিকে দিকে আইসিইউ’র বিছানায় থেকে সহকর্মী হত্যা মামলার আসামিে এখন তারা। বলছি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের হত্যা মামলার আসামিদের কথা। পহেলা নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে স্ত্রীর কাছ থেকে কাজের কথা বলে বের হন শান্ত সরকার। পরে মেঘনা নদীর কালিরচর এলাকায় মাছের ট্রলার ও স্পিডবোটের সাথে সংঘর্ষে হয়ে মর্মান্তিক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয় বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে মিন্টু ঢাকার একটি হাসপাতালে পাঁচ দিন, শামীম দশ দিন ও সাইফুল ইসলামকে সাত দিন নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্র আইসিইউতে ছিলেন। এছাড়া গোলাম কিবরিয়া মিঝি এবং শাহাদাৎ বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারা সকলে নিহত জেলা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের স্পিডবোটে ছিলেন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শাহাদাৎ’র ভাই বাদি হয়ে ঘাতক ট্রলার চালকের বিরুদ্ধে কালিরচর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েও হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় মর্মাহত তারা। নিজেদের বিচার দূরের কথা, এখন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ভয়ে এদিক-সেদিক পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। আইসিইউতে থেকেও হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

তারা বলেন, আজকে শান্তর মৃত্যু না হয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারত। কিন্তু আল্লাহ্ সহায় ছিলেন বলে বেঁচে গেছে। শান্তর পরিবার ট্রলার চালকের বিরুদ্ধে মামলা না করে উল্টো আইসিইউতে থাকা আহতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ঘাতকদের আড়াল করতে আহদের বিরুদ্ধে মামলা এটা অন্যায় ও অবিচার। তারা এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চায়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা নভেম্বর সন্ধ্যায় চরকিশোরগঞ্জ থেকে শান্ত সরকারের স্পিডবোটে উঠে শাহাদাৎ। পরে মুক্তারপুর ফেরিঘাট থেকে উঠে শান্ত। তখন শান্তের স্পিডবোটে ছিলেন শান্তসহ শাহদাৎ তার ভাতিজা সাইফুল, মতলব উত্তরের শামীম ও স্পিডবোট চালক টিপু। তাদের উদ্দেশ্য ঢাকার সদরঘাট। শামীমের ফোন পেয়ে সদরঘাটে আসেন গোলাম কিবরিয়া মিঝি। তখন মিঝির সাথে ছিলো আরো তিনজন। তাদের সকলের উদ্দেশ্য মুন্সীগঞ্জের কালিয়ারচর। রাত সাড়ে ৮টায় কালিয়ারচরে যাওয়ার সময় মোহনপুর থেকে আসা একটি মাছ ধরার ট্রলার কোনো কিছু বুঝার আগে শান্তর স্পিডবোটের বাম সাইডে দিয়ে উঠিয়ে দেয়। তখন শান্ত সরকার, শামীম, শাহাদাৎ ও কিবরিয়া মিঝি স্পিডবোটের দেওয়ানির নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তার কিছুক্ষণ পর আহত অবস্থায় কিবরিয়া মিঝি ফোন দিয়ে সংঘর্ষের কথা জানালে কয়েকজন লোক এসে তাদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের অবস্থায় আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইলিয়াস শান্ত সরকারের মৃত্যু হয়।

আইসিইউ থেকে ফিরে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে শামীম জানান, কেউ কাউকে হত্যা করলে সে নিজে মুমূর্ষ অবস্থায় আইসিইউতে দশ দিন থাকে না। কারো ইন্দনে আমাকে হয়রানি করার জন্য হত্যা মামলা দিয়েছে। এটা দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই না। সূর্যের আলো যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য।

আহত মিন্টু বলেন, ঘটনার ছয়দিন পর্যন্ত আমার জ্ঞান ছিলো না। পরে পরিবারের মাধ্যমে জানতে পারি শান্ত মারা গেছে ও শান্তর ভাই আমাদের নামে মামলা করেছে।

আরেক আহত গোলাম কিবরিয়া মিঝি বলেন, এ ঘটনায় আমরাও মারা যেতে পারতাম? শান্তর জায়গায় আমি থাকতে পারতাম?  তবে দুঃখের বিষয় যে, যেখানে আমাদের জীবন সংকটাপন্ন যেখানে হয়েছি হত্যা মামলার আসামি। শান্তর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই। যেনো কোনো নিরপরাধ মানুষ এ মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বলে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন তিনি।

শাহাদাৎ বলেন, স্প্রীড বোট দুর্ঘটনায় আমরা মৃত্যু শয্যায়। সেখানে আমাদের নামে দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলা। আমরা কার কাছে গিয়ে বিচার চাইবে। আমাদের সেই অবস্থায় রাখা হয়নি। তারা মামলা দিয়ে খ্যান্ত হয়নি। আমাদের খুনি বানিয়ে রাস্তার দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে আমাদের মানহানি করছে। আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত আসামিকে বিচারের আওয়াতায় আনা হোক।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই সাদ্দাম এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহতের ভাই বাদি হয়ে গেলো ৬ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তাধিন রয়েছে। ময়নাতদন্তর রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।