নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে নানা সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, অথচ রয়েছে জনবল ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। সেখানে চিকিৎসকের মোট ৪০টি পদের মধ্যে ২০টি এখনো শূন্য। বিশেষ করে কার্ডিওলজি, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেই।
শুধু চিকিৎসকই নয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটও প্রকট। ৩য় শ্রেণিতে ৪০ পদের বিপরীতে আছেন ২৩ জন, আর ৪র্থ শ্রেণিতে ২৩ পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৬ জন। সহসেবক, হিসাবরক্ষক, স্ট্রেচার বহনকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রোববার (১০ আগস্ট) হাসপাতালে ৯০৮ জন রোগী ভর্তি ছিলেন, যা শয্যাসংখ্যার প্রায় নয়গুণ। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৯৯৯ জন রোগী। এ দিন সকাল থেকেই টিকিট কাউন্টারে ছিল লম্বা লাইন। মাত্র ৪-৫ জন চিকিৎসক বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন, ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের।
সদর উপজেলার কাগজিপাড়ার বাসিন্দা রেক্সোনা (৩৪) বলেন, ‘জ্বর ও মাথাব্যথা নিয়ে এসেছি। দুই-আড়াই ঘণ্টা ধরে বসে আছি, এখনো সিরিয়াল পাইনি।’
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, একেকটি শয্যায় ২-৩ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। অনেকে বারান্দা ও পথঘাটেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। লোহাগড়ার জিহাদুল বলেন, ‘তিন দিন ধরে ভর্তি আছি, কোথাও বেড পাইনি, মেঝেতেই আছি।’
মহিলা ওয়ার্ডের ইনচার্জ নার্স শাহিনুর খাতুন বলেন, ‘রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে, তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, ‘প্রতিদিন শয্যাসংখ্যার চার-পাঁচ গুণ বেশি শিশু রোগী থাকে। আমরা সীমিত সম্পদে চেষ্টা করছি সেবা দিতে।’
এদিকে হাসপাতালের টয়লেট ও পানীয় জলের অবস্থা আরও দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে। অধিকাংশ শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন ও ব্যবহার অনুপযোগী। রোগীর স্বজন শামিম ইসলাম জানান, ‘বাথরুমে ঢুকলেই বমি আসে, অবস্থা ভয়াবহ।’
এ ছাড়া হাসপাতালের নলকূপগুলো কাজ না করায় সুপেয় পানির জন্য রোগীদের বাইরে থেকে পানি কিনতে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুজল কুমার বকশী বলেন, ‘চরম জনবল সংকটে প্রতিদিন তিনগুণ রোগী সামলাতে হচ্ছে। অর্ধেকের কম জনবল নিয়ে আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন