নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে রাকিবুল ইসলাম রেদোয়ান (১৮) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর চোখ উপড়ে নির্মমভাবে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে অপহরণকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) গভীর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধুখালী এলাকায় এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
আহত রাকিবুল ইসলাম স্থানীয় সলিমুদ্দিন চৌধুরী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ওই এলাকার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের ছেলে।
ভুক্তভোগীর বাবা আক্তার হোসেন জানান, একই এলাকার পুলিশ সোর্স বাদল হোসেন, তার সহযোগী রিফাত, হোসেন আলী ও মঞ্জুরুল মিলে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে তার ছেলেকে অপহরণ করেন। পরে মধুখালী পশ্চিমপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেন দেলুর পরিত্যক্ত একটি ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয় রেদোয়ানকে।
এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা ফোন করে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তিনি বিষয়টিকে প্রথমে মজা ভেবে ফোন কেটে দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে অপহরণকারীরা ছোরা দিয়ে রেদোয়ানের ডান চোখ উপড়ে ফেলে।
রেদোয়ানের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাবাসপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকার চক্ষু হাসপাতাল, আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর করা হয়।
আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘রিফাত, বাদল, মঞ্জুর, হোসেন আলী—ওরা সবাই এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি আর জমি দখলের সঙ্গে জড়িত। আমি মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওরা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে। এখন আমি নিজের জীবন নিয়েও শঙ্কায় আছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।’
ভুক্তভোগীর চাচা কবির হোসেন বলেন, ‘শনিবার রাত ১১টার দিকে আমার ভাতিজাকে তিন রাস্তা এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় রিফাত ও তার সহযোগীরা। রাত দুইটার দিকে স্থানীয়রা খবর দেয়, রেদোয়ানের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। রিফাত দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।’
যার বাড়িতে ঘটনা ঘটেছে, সেই বাড়ির মালিক ছামিরন বেগম জানান, ‘আমি সেদিন রাতে বাড়িতে ছিলাম না। সকালে শুনি পাশের ঘরে এক ছেলেকে মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এরপর পুলিশ এসে তদন্ত করে।’
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাইরে আসি। পরে জানতে পারি, এক ছেলেকে ভয়ংকরভাবে আহত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নৃশংস। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে এবং আইনানুগ সব প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, মধুখালী এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, জমি দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের ধারণা, প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও টহল না বাড়ালে এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধ আরও বেড়ে যেতে পারে।




