ভাবির সঙ্গে শেষবার আজ দুপুরে কথা বলেছিলেন আবুল কালাম আজাদ। বলেছিলেন, ‘দুয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি আসব, ইলিশ মাছ কিনে রেখ।’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তার দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে।
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে ভারী যন্ত্রাংশ (বিয়ারিং প্যাড) নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ (৩৫) নামে ওই তরুণ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে। ঘটনাস্থল ছিল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে।
নিহত আবুল কালাম আজাদ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বসবাস করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক।
নিহতের পারিবার সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। নিয়মিত ব্যবসায়িক কাজে ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত ছিল তার।
নিহতের মেজ ভাবি আছমা বেগম বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। বলেছিল, দুয়েক দিনের মধ্যে বাড়ি আসব, তুমি ইলিশ মাছ কিনে রেখ। কিন্তু ভাই আর বাড়ি ফিরল না।’
চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার জানান, ‘কালাম খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী মানুষ ছিল। নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল। এমন দুর্ঘটনা সরকারের অবহেলার কারণেই ঘটেছে। এখন ওর সংসার কীভাবে চলবে?’
নিহতের পরিবার আরও জানায়, আবুল কালাম ৫ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ও ৩ বছরের কন্যা সুরাইয়া আক্তারের বাবা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি এখন নিঃস্ব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হঠাৎ করেই মেট্রোরেল পিলারের ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাডটি নিচে পড়ে যায়। সেটি কালামের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সড়ক ও রেলপথ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, নিহতের পরিবারের প্রতি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারের কর্মক্ষম কাউকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়া হবে।
নিহতের প্রতিবেশীরা বলছেন, কালাম ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিল। পরিবারের হাল ধরেছিল সে-ই। এখন তার শিশুসন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে? শেষ ফোনে বলেছিলেন,‘ইলিশ মাছ কিনে রেখ ভাবি।’ তারপরই চিরতরে নীরব হয়ে গেলেন শরীয়তপুরের তরুণ ব্যবসায়ী আবুল কালাম।

