মৃত্যুর ১৫ ঘণ্টা আগে জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলেন আবুল কালাম। মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে সত্যি পালিয়ে গেলেন তিনি। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে এর আঘাতে নিহত হন আবুল কালাম আজাদ (৩৬)।
কিশোর বয়সে বাবা-মাকে হারানো আবুল কালাম ভাই-বোনদের সংসারে বড় হয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান এবং ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের রয়েছে ছয় বছরের এক ছেলে এবং চার বছরের একটি মেয়েসন্তান। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন।
আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে এসে কাজের জন্য বের হন আবুল কালাম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট এলাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে তার মাথায় আঘাত হানে। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই ভারী ধাতব অংশটি নিচে পড়ে আঘাত করে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত করতেন এবং ব্যক্তিগত কাজে প্রায়ই ওই এলাকায় যেতেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চার ভাইয়ের মধ্যে ছোট আবুল কালাম পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার ছেলে আব্দুল্লাহর বয়স ৫ বছর এবং মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স ৩ বছর।
দুর্ঘটনার প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে তিনি পোস্ট দেন, ‘ইচ্ছে তো অনেক, আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতের ভাবি আছমা আক্তার বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। বলেছিল, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসবে, আর আমাকে ইলিশ মাছ কিনে রাখতে বলেছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুনি মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মারা গেছে। সংসারের হাল ধরেছিল সে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্য বিচার চাই।’
নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কালাম পরিশ্রমী ছিল। নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল। এমন আকস্মিক মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। সরকারের অবহেলার কারণে আমাদের ভাইটি মারা গেছে। সরকার যেন পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।’
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

