ঢাকা সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

চাঁদাবাজদের হুমকিতে রাজবাড়ী হাসপাতালের লিফটের কাজ বন্ধ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৯:১২ এএম
রাজবাড়ীতে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল। ছবি- সংগৃহীত

রাজবাড়ীতে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের নির্মাণকাজ স্থানীয় চাঁদাবাজদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নির্মাণাধীন হাসপাতালের লিফট স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করছে একাধিক চাঁদাবাজ চক্র। এ নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার।

সম্প্রতি রাজবাড়ীর অফিসার ক্লাবে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

হাসপাতাল নির্মাণকাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ এসে লিফটের ঠিকাদারের কাছে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে তারা হুমকি দিচ্ছে। একাধিকবার চাঁদা পরিশোধ করার পরও নতুন নতুন গ্রুপ এসে দাবি জানায়। ঠিকাদার এখন আতঙ্কে রয়েছেন, কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে হাসপাতালের এসির তার এবং আউটডোরের মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এখন আবার লিফট স্থাপন নিয়েও চরম সংকট তৈরি হয়েছে।

চাঁদাবাজির বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি বিনিময়ও হয়েছে।

২০ জানুয়ারি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, ১৯ জানুয়ারি দুপুরে ৮-১০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি সাইটে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করে ও মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।

তিনি আগামী দুই মাস নির্মাণস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। ওই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক, রাজবাড়ী সদর থানার ওসি, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সেনা ক্যাম্প ইনচার্জ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

২১ জানুয়ারি রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ মন্ডল সদর থানার ওসির বরাবর আরও একটি চিঠি দেন। সেখানে নির্মাণসাইটে কর্মরত লোকজন ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠির অনুলিপিও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক স্থাপনায় চাঁদাবাজির ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উঠেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না।

রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, হাসপাতাল হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে মানবিক স্থান। সেখানে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা গভীরভাবে হতাশাজনক। দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

২০১৮ সালে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ তলা ভবনে লিফট স্থাপন কাজ চলছে, যা চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।