রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চলের চারঘাট উপজেলার রেললাইন আবারও বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল স্থানীয় গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায়। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়গামী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাকালীন বালুদিয়াড় এলাকায় রেললাইনের দুই ফুট অংশ ভেঙে যায়। স্থানীয় এক তরুণ ভাঙা অংশটি দেখে গ্রামবাসীকে খবর দিলে তারা লাইট ও লাল কাপড় নিয়ে ট্রেন থামাতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় ছয়টি ট্রেন তিন ঘণ্টা আটকা পড়ে।
রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর জংশন পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সিঙ্গেল ব্রডগেজ রেললাইনে প্রতিদিন ১৫টি ট্রেন ৩০ বার চলাচল করছে। পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনও চলাচল করছে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত চাপের কারণে রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে বা রেললাইনের পাত ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সূত্রে জানা যায়, ‘রাজশাহী থেকে চারঘাটের সরদহ রোড স্টেশন ও নন্দনগাছী স্টেশন হয়ে বাঘার আড়ানী স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। একমাত্র রেলব্রীজ আড়ানী বড়াল রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯১০ সালে নির্মিত এই ব্রিজে স্লিপারের সংখ্যা ও ক্লিপ প্রয়োজনমতো নেই। ২৬২টি স্লিপারের মধ্যে ৭৩টি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্রিজের পিলারের গোড়ায় পাথর ও মাটি প্রায় শেষ।’
অতীতের দুর্ঘটনা ও গ্রামবাসীর উদ্যোগ
পূর্বেও এ রুটে বড় দুর্ঘটনা এড়ানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বাগমারী এলাকায় ১০ ইঞ্চি রেললাইন ভেঙে যায়; স্থানীয়রা লাল গামছা উড়িয়ে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস থামিয়ে ৫০০ যাত্রীর জীবন রক্ষা করেন। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বনলতা এক্সপ্রেসের ৮ ইঞ্চি ভাঙা লাইনের কারণে ৮৫০ যাত্রীর প্রাণ বাঁচানো হয়। ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আড়ানী রেলব্রিজের ১৫ ইঞ্চি ভাঙা লাইনে গেটম্যান লাল কাপড় উঁচিয়ে উত্তরা এক্সপ্রেস থামান।
সংস্কারের উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আহসান জাবির জানান, ১৯৬২ সালে নির্মিত রেললাইন ও শতবর্ষের আড়ানী ব্রিজের কারণে অনিরাপদ অংশগুলো মেরামত করা হচ্ছে। নতুন ডাবল লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহীর মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, রেললাইনের সংস্কারের জন্য একটি নতুন প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।