রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার খাদ্যগুদামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিম্নমানের ও খাওয়ার অনুপযোগী ৮০ মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে নতুন চালের ব্যবস্থা করায় সর্বমহলে প্রশংসা পেয়েছেন দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে ওই গুদাম থেকে এ পর্যন্ত খাবার অনুপযোগী ৮০ মেট্রিক টন চাল বের করেন। নিম্নমানের চাল উদ্ধারের ঘটনায় এরই মধ্যে দুর্গাপুর উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপকারভোগীদের মাঝে চাল নিয়ে অসন্তোষ ও অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ আগস্ট আকস্মিক খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাবরিনা শারমিন। এ সময় তিনি লাল তামড়ি চাল শনাক্ত করেন, যা মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী।
সে প্রেক্ষিতে, টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নিম্নমানের চালের মিশ্রণ শনাক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপর তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
এ ছাড়া, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকেও পৃথক কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটি গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দুর্গাপুর খাদ্যগুদাম থেকে মোট ৮০ মেট্রিক টন খাওয়ার অনুপযোগী চাল বের করেছে।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম অতীব গোপনে গত ২৮ আগস্ট ১৩২ বস্তা নিম্নমানের চাল খাদ্যগুদাম থেকে সরিয়ে গুদামের নিরাপত্তা প্রহরি শাহজাহানের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাল উদ্ধার করেন এবং রফিকুলকে স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে তলব করলে তিনি তার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে দ্রুতই চালগুলো স্থানান্তর করতে ওই বাড়িও পরিদর্শন করেন।
এদিকে, এ ঘটনার পরে টিসিবি ও সরকার কর্তৃক অসহায় দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বরাদ্দকৃতরা বর্তমানে ভালো মানের চাল পাওয়ায় এমন অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে ইউএনও-কে প্রশংসা করেন তারা।
দেলুয়াবাড়ী গ্রামে হাওয়া বেগম বলেন, ‘আমরা আগে বেশিরভাগ সময় কার্ডের মাধ্যমে ইউনিয়নে দেওয়া ৩০ কেজি করে চাল অতি নিম্নমানের খারাপ চাল পেতাম। ইউএনও স্যার গুদামে খারাপ চাল ধরার পরে এখন আমরা ভালো চাল পাই।’
টিসিবি কার্ডধারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করা ৫ কেজি করে চাল অতি ভালো মানের। এ চাল খাওয়ার উপযোগী। আগে যে চাল পাওয়া যাচ্ছিল তা খাওয়ার অনুপযোগী ছিল। বিশেষ করে সেই চাল গরু ও হাঁস-মুরগিকে খাওয়াতে হতো। খারাপ চাল বিতরণ বিষয়ে কেউ কথা বলত না।’ তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন মহতী কাজকে স্বাগত জানান।
আরও জানা যায়, এ পর্যন্ত খাদ্যগুদামে ৮০ মেট্রিক টন নিম্নমানের চাল শনাক্ত করা হয়েছে, যা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে পরামর্শক্রমে ৮০ মেট্রিক টন উন্নতমানের চাল সরবরাহ করেছে।
উন্নতমানের চাল বুঝে পাওয়ার পর স্থগিত সকল সরকারি কার্যক্রম গত ৪ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুরু করা হয়েছে। এ নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটি চালের মিশ্রণ ও নিম্নমানের চাল মজুদের সত্যতা পেয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানো হয়েছে।
সূত্র মতে, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে রফিকুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর সংযুক্তি মূলআধারে বদলি করা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান আলম ও শ্রী বাবুল কুমারকে বগুড়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমাকে শোকজ করা হয়েছিল, আমি তার যথাযথ উত্তর দিয়েছি। আমায় বদলি করা হয়েছে। ওই চাল সম্পর্কে কিছু জানি না। ৬০ মেট্রিক টন চাল রিপ্লেস করা হয়েছে, আরও বাকি ২০ মেট্রিক টন রিপ্লেস হবে। আমি শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ করিনি, চালগুলো অন্য গুদাম থেকে এসেছে।
দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী জানান, উদ্ধার হওয়া চাল সম্পর্কে কিছু জানি না। খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের দায়িত্ব ভালো চাল বুঝে নেওয়া। তার ব্যর্থতার কারণেই নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তা শনাক্ত করে রিপ্লেস করেছি। রফিকুলসহ মোট তিনজনকে বদলি করা হয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি দিয়েছি।’