ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

দৌলতদিয়ায় বিআইডব্লিউটিএ’র টোল আদায়ে অনিয়ম, দুর্নীতির মহোৎসব

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র টোল আদায়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়, টিকিটবিহীন টাকা গ্রহণ এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০টি ছোট-বড় যানবাহন পারাপার হয়। এসব যানবাহনের কাছ থেকে বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা সরকার নির্ধারিত টোলের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘাটে কর্মরত কিছু কর্মচারী গ্রুপ লিডার আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন এবং দিন শেষে বাড়তি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এক হিসাব অনুযায়ী, যদি প্রতিটি গাড়ি থেকে ন্যূনতম ৫ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, তাহলে দৈনিক আদায় হয় প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা; মাসে ৭৫ হাজার এবং বছরে প্রায় ৯ লাখ টাকা। আর সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হিসেবে ধরলে পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৭২ লাখ টাকা।

চালকরা অভিযোগ করেন, ‘ভাংতি নেই’ বা ‘চা খাওয়ার টাকা’—এ ধরনের অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে অপমান, গালাগাল এবং বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক সময় গাড়ি আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে বলে জানিয়েছেন তারা।

নিজেকে গ্রুপ লিডার পরিচয় দেওয়া আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তারা ‘ভাংতি না থাকার কারণে’ ৫ টাকা করে বেশি নেন। তবে তিনি বাড়তি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা শাখার পোর্ট অফিসার সুব্রত রায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাথী দাস বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে বাড়তি টাকা আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দৌলতদিয়া ঘাটের এই প্রকাশ্য অনিয়ম বছরের পর বছর ধরে চললেও প্রশাসনের নীরবতা স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে—তাহলে কি এই দুর্নীতিরও আছে অদৃশ্য ছায়া?